
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে গলে যাওয়া হিমবাহের ফলে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ আরও বেশি ও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে—এমনটাই সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের গতিও আরও বেড়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে নতুন এক গবেষণায়।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে অনুষ্ঠিত ২০২৫ গোল্ডশমিড কনফারেন্সে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকা, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও উত্তর আমেরিকায় শত শত আগ্নেয়গিরি হিমবাহের নিচে অবস্থান করছে। তবে পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে এসব বরফ গলতে শুরু করলে সেই চাপমুক্ত এলাকায় থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো আরও বেশি বিস্ফোরক হয়ে উঠবে।
গবেষক দলের প্রধান, উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক পাবলো মোরেনো ইয়েগার জানান, ‘হিমবাহ থাকা অবস্থায় আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ দমন হয়। কিন্তু বরফ গলতে শুরু করলে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ বেড়ে যায় এবং তা আরও বেশি ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে।’
এ প্রক্রিয়াটি প্রথম ধারণা করা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। এর পেছনের ব্যাখ্যাও সহজ: হিমবাহের ওজন পৃথিবীর ভূত্বক ও অভ্যন্তরীন স্তরের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যখন এই বরফ গলে যায়, সেই চাপ হ্রাস পায় এবং এর ফলে গ্যাস ও ম্যাগমা প্রসারিত হয়ে বিস্ফোরণের পরিবেশ তৈরি করে।
এই প্রক্রিয়াই অতীতে আইসল্যান্ডের ভূপৃষ্ঠ বদলে দিয়েছে। ১০ হাজার বছর আগে শেষ বরফ যুগের শেষে আইসল্যান্ডের হিমবাহ গলে গেলে সেখানকার আগ্নেয়গিরিগুলোর বিস্ফোরণ হার ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেড়ে যায়।
গবেষকরা এবার দক্ষিণ চিলির ছয়টি আগ্নেয়গিরির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো বর্তমানে নিস্ক্রিয় মোচো-চোশুয়েনকো আগ্নেয়গিরি। গবেষণায় তারা দেখতে পান, ২৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার বছর আগে ওই অঞ্চলে পুরু বরফের আবরণ বিস্ফোরণ দমন করলেও পরে যখন বরফ গলে যায়, তখন চাপ সঞ্চিত হয়ে এক ধ্বংসাত্মক উদ্গিরণ ঘটায়, যার ফলেই সৃষ্টি হয় মোচো-চোশুয়েনকো আগ্নেয়গিরি।
২০২০ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ২৪৫টি সক্রিয় বা সম্ভাব্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বরফের নিচে বা বরফের তিন মাইলের মধ্যে অবস্থিত।
পাবলো ইয়েগার বলেন, ‘একটি আগ্নেয়গিরিকে মারাত্মক বিস্ফোরণে পরিণত করার জন্য প্রয়োজন পুরু হিমবাহ এবং সেটির গলনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া বর্তমানে অ্যান্টার্কটিকা, রাশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও নিউজিল্যান্ডে শুরু হয়ে গেছে—যেখানে জরুরি ভিত্তিতে আরও বৈজ্ঞানিক নজরদারির প্রয়োজন।’
সংক্ষিপ্ত সময়ে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে সালফেট অ্যারোসল নিঃসরণ হয়, যা সূর্যালোক প্রতিফলিত করে এবং অস্থায়ী শীতলতা তৈরি করতে পারে। অতীতে এমন ঘটনার পর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।
তবে দীর্ঘমেয়াদে আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
ইয়েগার বলেন, ‘যত বেশি বিস্ফোরণ ঘটবে, তত বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস জমা হবে, যা আবার বরফ গলনের গতি বাড়াবে। এ এক ধরনের দুষ্টচক্র—বরফ গলে বিস্ফোরণ, আর বিস্ফোরণ জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত করবে।’
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব