
ছবি: সংগৃহীত
অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এখনো এমন সব ভুল চার্জিং অভ্যাস মেনে চলেন, যা তাদের ডিভাইসের জন্য ক্ষতিকর। যদিও অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে, তবুও বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর জন্য ব্যাটারির স্বাস্থ্য এখনও বড় উদ্বেগের বিষয়। চলুন জেনে নিই, এমনই ৫টি প্রচলিত চার্জিং মিথ এবং সেগুলোর পেছনের বাস্তব সত্য।
মিথ ১: রাতে ফোন চার্জে দিয়ে রাখা ব্যাটারি নষ্ট করে
সবচেয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো, রাতে ঘুমানোর সময় ফোন চার্জে দিয়ে রাখলে ব্যাটারি নষ্ট হয়। তবে বর্তমানে অধিকাংশ স্মার্টফোনেই অত্যাধুনিক স্মার্ট চার্জিং প্রযুক্তি রয়েছে। এসব প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর চার্জিং সিস্টেম, নির্দিষ্ট লেভেলে পৌঁছালে চার্জ নেওয়া বন্ধ করে দেয় — সাধারণত ৮০% পর্যন্ত চার্জ করে, এরপর ব্যবহারকারী কখন চার্জার খুলবেন, তা আন্দাজ করে সামান্য চার্জ বাড়ায়।
তবে রাতভর চার্জ দিলেও সরাসরি ক্ষতি না হলেও, দীর্ঘ সময় ১০০% চার্জ অবস্থায় রাখলে ব্যাটারির আয়ু দ্রুত কমে যায়। বর্তমানে অনেক ফোনেই ৮০% পর্যন্ত চার্জ সীমাবদ্ধ রাখার অপশন রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারি ভালো রাখে।
মিথ ২: দিনে বারবার চার্জ দেওয়া ক্ষতিকর
অনেকে মনে করেন, দিনে বারবার ফোন চার্জ দেওয়া ক্ষতিকর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ২০% থেকে ৮০% চার্জের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করে। এই সীমার মধ্যে বারবার চার্জ দেওয়া, অর্থাৎ ‘টপ-আপ’ চার্জিং, ফোনের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর।
শূন্য শতাংশ পর্যন্ত ব্যাটারি নামানো অত্যন্ত ক্ষতিকর। বরং ছোট ছোট চার্জিং সেশন ব্যাটারির আয়ু দীর্ঘ করে।
মিথ ৩: সব ফাস্ট চার্জার একই রকম কাজ করে
সব ফাস্ট চার্জার এক নয়। বিভিন্ন স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরনের চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন USB Power Delivery (USB-PD), Programmable Power Supply (PPS), বা SuperVOOC, HyperCharge-এর মতো নিজস্ব প্রযুক্তি।
অপন্থিত বা অসমর্থিত ফাস্ট চার্জার ব্যবহারে ফোন নষ্ট না হলেও কাঙ্ক্ষিত গতি পাওয়া যায় না। তাই চার্জার কেনার আগে ফোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জিং প্রযুক্তি ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি।
মিথ ৪: শুধুমাত্র ফোন ব্র্যান্ডের চার্জারই নিরাপদ
অনেক ফোন নির্মাতা এখন আর চার্জার সরবরাহ করে না, ফলে অনেক ব্যবহারকারী দামি অফিসিয়াল চার্জার কিনতে বাধ্য হন। তবে Anker, Belkin, Spigen, UGreen-এর মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের চার্জারও আন্তর্জাতিক মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
এসব চার্জার সাধারণত প্রধান ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি সমর্থন করে এবং অধিকাংশ ফোনই নিরাপদে ও কার্যকরভাবে চার্জ করতে পারে — তবে যদি ফোনে একেবারে বিশেষায়িত প্রযুক্তি না থাকে।
মিথ ৫: ওয়্যারলেস চার্জিং একদম নিরাপদ ও কার্যকর
ওয়্যারলেস চার্জিং যতই সুবিধাজনক হোক, কিছু ঝুঁকি থেকে যায়। এটি সাধারণত তারযুক্ত চার্জিংয়ের তুলনায় বেশি তাপ উৎপন্ন করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে। নিয়মিত ওয়্যারলেস চার্জিং ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়।
যারা প্রায়ই ওয়্যারলেস চার্জার ব্যবহার করেন, তাদের উচিত কুলিং সিস্টেম বা তাপ নিয়ন্ত্রণ সুবিধাযুক্ত চার্জার ব্যবহার করা। সবদিক বিবেচনায়, ব্যাটারি সুরক্ষার জন্য তারযুক্ত চার্জিং এখনো সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর।
অনেক পুরনো চার্জিং মিথ এখনো ব্যবহারকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ বর্তমান স্মার্টফোনগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান এবং নিজে থেকেই চার্জিং সামলাতে পারে। এসব মিথ ভেঙে সঠিক চার্জিং অভ্যাস গড়ে তুললে, সহজেই আপনার ফোনের ব্যাটারির আয়ু অনেকটাই বাড়াতে পারবেন।
আবির