
ছবি: সংগৃহীত
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জগতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটিয়েছে কানাডার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান নর্ড কোয়ান্টিক (Nord Quantique)। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তারা এমন এক কোয়ান্টাম কিউবিট তৈরি করেছে, যার ভেতরেই বিল্ট-ইন ত্রুটি সংশোধন (error correction) রয়েছে—ফলে আলাদা করে অসংখ্য কিউবিট ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না।
এই প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি ২০৩১ সালের মধ্যে ১,০০০ লজিক্যাল কিউবিটের একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে চায়, যার আকার হবে মাত্র ২০ বর্গমিটার—যা একটি ডেটা সেন্টারে অনায়াসেই বসানো যাবে। আর এটি চলবে সুপারকম্পিউটারের তুলনায় মাত্র এক ভগ্নাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
২০২৪ সালে প্রোটোটাইপের সফলতা
গত বছর নর্ড কোয়ান্টিক প্রথমবারের মতো তাদের উদ্ভাবিত ‘বসনিক কিউবিট’ প্রদর্শন করে, যা সরাসরি হার্ডওয়্যারের মধ্যে কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধনের ক্ষমতা রাখে। প্রতিষ্ঠানটির ভাষায়, এটি ‘প্রয়োগিক পদার্থবিদ্যার এক ঐতিহাসিক প্রথম’, যা সত্যিকার অর্থেই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পথ খুলে দিয়েছে।
সাধারণ কিউবিট বনাম বসনিক কিউবিট
পারম্পরিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোতে একটি মাত্র ‘লজিক্যাল কিউবিট’ তৈরি করতে প্রায় শতাধিক ‘ফিজিক্যাল কিউবিট’ প্রয়োজন হয়, যা খরচ ও জটিলতা দুই-ই বাড়িয়ে দেয়। তবে নর্ড কোয়ান্টিকের কিউবিট নিজেই ত্রুটি সংশোধনে সক্ষম—এতে আলাদা করে অতিরিক্ত কিউবিটের প্রয়োজন নেই।
তারা যে ‘মাল্টিমোড এনকোডিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, তাতে একই কিউবিটের ভেতরে একাধিক মোড বা রেজোন্যান্স তৈরি হয়, যেগুলোর মাধ্যমে তথ্য একযোগে সংরক্ষিত ও সংশোধিত হয়। এর ফলে কোনও একটি মোডে সমস্যা হলেও অন্য মোড থেকে সঠিক তথ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।
বিদ্যুৎ খরচ ও কার্যক্ষমতা
গবেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, তাদের প্রস্তাবিত ১,০০০-কিউবিট কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি ৮৩০-বিটের আরএসএ এনক্রিপশন (RSA encryption) মাত্র ১ ঘণ্টায় ভেঙে ফেলতে পারবে, এবং খরচ হবে মাত্র ১২০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ। তুলনায় একটি আধুনিক সুপারকম্পিউটারকে একই কাজ করতে লাগবে ৯ দিন এবং প্রায় ২৮০,০০০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ।
নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা
এই নতুন প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ‘টেসারাক্ট কোড’ নামের একটি বসনিক কোড কোয়ান্টাম তথ্যের বিট ফ্লিপ, ফেজ ফ্লিপসহ নানা ধরণের ত্রুটির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। গবেষকেরা ৩২ দফা ত্রুটি সংশোধনের পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, কিউবিটের অবস্থা কোনো ধরনের উল্লেখযোগ্য অবনতি ছাড়াই স্থির ছিল।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
নর্ড কোয়ান্টিক ২০২৯ সালের মধ্যে একটি ১০০-কিউবিট কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে এবং ২০৩১ সালে পূর্ণ ১,০০০-কিউবিটের সংস্করণ উন্মোচন করবে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও জুলিয়েন ক্যামিরান লেমায়ার বলেন, ‘আমাদের কম্পিউটারগুলো শুধু আকারে ছোট নয়, বরং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটিং সেন্টারগুলোতে ব্যবহারের জন্য আদর্শ।’
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব