
ছবি: সংগৃহীত
গুগলের বার্ষিক I/O ইভেন্টে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউ-তে নতুন এআই প্রযুক্তি ও পণ্যের মোড়ক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI) অর্জনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস জানান, AGI অর্জনের জন্য যেসব মূল ক্ষমতা দরকার, তার প্রাথমিক রূপ ইতোমধ্যেই গুগলের জেমিনি মডেলগুলোতে দৃশ্যমান।
হাসাবিস মার্কিন প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী WIRED-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বর্তমানে চ্যাটবটগুলো যেভাবে কাজ করছে, তা শুধু একটি অস্থায়ী অবস্থা। ভবিষ্যতের এআই হবে আরও বেশি সক্ষম, আত্মনির্ভরশীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত।”
ইভেন্টে গুগল Gemini Flash এবং Gemini Pro–এর উন্নত সংস্করণ উন্মোচন করে। এর মধ্যে Gemini Flash হলো এখন পর্যন্ত গুগলের সবচেয়ে দ্রুতগতির মডেল, আর Gemini Pro সবচেয়ে শক্তিশালী। গুগলের দাবি, নতুন Gemini Pro এখন LMArena নামের জনপ্রিয় এআই মূল্যায়ন প্ল্যাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বী সব মডেলকে ছাড়িয়ে গেছে।
ডেমিস হাসাবিস জানান, জেমিনির যুক্তি-প্রয়োগ, নিজে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা (agency) এবং বাস্তব বিশ্বের ধারণা গঠনের প্রাথমিক দক্ষতাই ভবিষ্যতের উন্নত ব্যক্তিগত সহকারী, কার্যকর হিউম্যানয়েড রোবট এবং শেষমেশ মানবসদৃশ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এআই তৈরির ভিত্তি গড়ে তুলছে।
গুগল এবার Gemini Pro-এর জন্য 'Deep Think' নামের একটি পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে, যা মানুষের মতো চিন্তা করার জন্য সমস্যাকে ভেঙে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। Gemini-এর প্রোডাক্ট লিড তুলসি দোশি জানিয়েছেন, এটির পেছনে জটিল কম্পিউটেশন এবং কিছু অপ্রকাশিত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।
একইসঙ্গে, গুগল ‘Mariner’ নামক একটি ব্রাউজার এজেন্টের প্রিভিউ দেখিয়েছে, যা ব্যবহারকারীর নির্দেশে অনলাইন কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কাজ Chrome-এর ভেতরে সম্পাদন করতে পারবে। এটি ‘Google AI Ultra’ নামে একটি নতুন সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত হবে, যার মাসিক মূল্য ধরা হয়েছে ২৪৯.৯৯ ডলার।
গুগলের পরীক্ষামূলক এআই সহকারী 'Astra'-এর উন্নত সংস্করণও প্রদর্শিত হয়েছে। এটি এখন স্মার্টফোন কিংবা স্মার্ট গ্লাসের মাধ্যমে চারপাশের বিশ্বকে দেখতে ও শুনতে পারে এবং সেই অনুযায়ী বাস্তব সময়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এক ডেমোতে দেখা যায়, এক ব্যবহারকারী বাইকের একটি যন্ত্রাংশ খুঁজে পেতে অ্যাস্ট্রার সাহায্য নিচ্ছেন, যেখানে অ্যাস্ট্রা শুধু চিনে নিতে নয়, স্মার্টফোন পরিচালনা ও ওয়েব সার্চ চালাতেও পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।
গুগল ‘AI Mode’ নামে একটি নতুন সার্চ ফিচার চালু করছে, যা প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি AI-চালিত নতুন শপিং টুল চালু করা হচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা পোশাকের ছবি আপলোড করে সেটি নিজের গায়ে কেমন লাগবে তা দেখতে পারবেন। AI Overviews ফিচারটিও আরও বেশি দেশে ও ভাষায় সম্প্রসারিত হচ্ছে।
AGI-এর আগমন নিয়ে প্রযুক্তি মহলে নানা মত রয়েছে। অনেক গবেষকের মতে, AGI হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই চলে আসবে, আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, এটি ইতিমধ্যেই সীমিতভাবে উপস্থিত। তবে হাসাবিসের মতে, সম্পূর্ণ মানবসদৃশ এআই তৈরিতে এখনও ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। “এটা খুব দূরের কিছু নয়,” তিনি বলেন। “তবে কাল কিংবা আগামী বছরও নয়।”
তিনি আরও বলেন, বাস্তব বিশ্বের জ্ঞান ও যুক্তির ক্ষমতা ছাড়া হিউম্যানয়েড রোবট কখনও বাস্তব জীবনে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে না। এ লক্ষ্যে DeepMind ইতিমধ্যে Apptroniks-এর মতো রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। Tesla, Agility, Figure AI ও 1X-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও হিউম্যানয়েড রোবট তৈরিতে কাজ করছে, তবে সেগুলোর কার্যকারিতা এখনও বাস্তব বুদ্ধিমত্তার অভাবে সীমিত।
“রোবটিক্সে আসল সমস্যা রোবট নয়,” বলেন হাসাবিস। “সমস্যা হচ্ছে তাদের বাস্তব জগৎ বোঝার অক্ষমতা।”
মানব বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সৃজনশীলতা। হাসাবিস বলেন, “১৯০০ সালে আইনস্টাইনের জ্ঞান দিয়ে কি আজকের এআই আপেক্ষিকতাবাদ আবিষ্কার করতে পারবে? অবশ্যই না।”
DeepMind এরই মধ্যে AlphaEvolve নামে একটি কোডিং এজেন্ট তৈরি করেছে, যা পুরনো সমস্যার নতুন সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠানটি এখন গণিত ও কোডিং ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত ক্ষেত্রে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর পথ খুঁজছে।
হাসাবিসের ভাষায়, “আমরা আগে গেম খেলার মাধ্যমে এআই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন সেই গেম মডেলকে ছেড়ে আমরা একটি বৃহৎ ‘বিশ্ব মডেল’ তৈরির দিকে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটাই AGI তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়।”
এম.কে.