
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ঘুরছে—যদি আইফোন সংযোজন কারখানা ভারতের থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে লাভবান হবেন কে এবং ক্ষতির মুখে পড়বেন কারা?
ভারতের পক্ষে এটি বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে ধরা হচ্ছে। যদিও অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের অংশ আইফোন উৎপাদনের মোট খরচের মাত্র কমই, তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানান, কারখানা স্থানান্তর হলে শুধু ভারত নয়, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে ১০০০ ডলারের আইফোন বিক্রির মধ্যে ভারতের অংশ মাত্র ৩০ ডলারের নিচে। তবে এই অংশ বাদ পড়লে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৭০০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বারবার দাবি করেছেন, অ্যাপল যেন চীন ও ভারতের পরিবর্তে নিজ দেশে পণ্য উৎপাদন করে। তিনি সম্প্রতি অ্যাপলের সিইও টিম কুককে পরামর্শ দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া সুবিধার প্রতিদান দিতে এপলকে দেশেই উৎপাদন বাড়াতে হবে।
জিটিআরআই এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, একটি আইফোনের উৎপাদনে মার্কিন কোম্পানি কোয়ালকম ও ব্রডকম মিলে আয় করে ৮০ ডলার, তাইওয়ান থেকে চিপ উৎপাদনে আসে প্রায় ১৫০ ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এলইডি ও মেমোরি সরবরাহে আসে ৯০ ডলার, আর জাপান থেকে ক্যামেরা সরবরাহ হয় ৮৫ ডলারের। তুলনায় ভারত ও চীনের প্রাপ্তি মাত্র ৩০ ডলার, যা মোট মূল্যের ৩ শতাংশেরও কম।
ভারতে প্রায় ৬০,০০০ জন কর্মী আইফোন সংযোজন কাজে নিযুক্ত, যেখানে চীনে এই সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। যদিও এই কাজ প্রযুক্তিগতভাবে বেশি উন্নত নয়, তবে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করলে খরচ বেড়ে যাবে বহুগুণ। ভারতে গড় মাসিক মজুরি ২৯০ ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে একই কাজের জন্য প্রায় ২৯০০ ডলার খরচ হতে পারে, যা ১৩ গুণ বেশি। ফলে আইফোন সংযোজন ব্যয় বাড়বে ৩০ ডলার থেকে লাফিয়ে ৩৯০ ডলারে। এতে অ্যাপলের প্রতি ইউনিট মুনাফা ৪৫০ ডলার থেকে কমে মাত্র ৬০ ডলারে নেমে আসবে।
এই পরিস্থিতিতে অ্যাপল যদি দাম বাড়ায়, তা সরাসরি মার্কিন ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। সুতরাং, সিইও টিম কুকের সামনে দুটি বিকল্প—যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চাপে মাথা নত করে লাভ কমানো, নাকি ভারতের মতো সাশ্রয়ী শ্রম বাজারে থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়া।
এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ দৃশ্যপটকে নতুন মোড় দিতে পারে।
রাজু