
সময় বাঁচাতে অনেক উদ্যোক্তাই আজ ভরসা রাখছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ওপর। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন জনপ্রিয় নিউজলেটার প্ল্যাটফর্ম Beehiiv-এর প্রতিষ্ঠাতা টাইলার ডেঙ্ক। সম্প্রতি তিনি নিজেই প্রকাশ্যে এনেছেন নিজের তৈরি এক এআই ক্লোন যার নাম দিয়েছেন ‘DenkBot’।
এই DenkBot-কে তৈরি করেছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান Delphi, যারা ব্যবহারকারীর লেখালেখি, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ভিডিও ও পডকাস্টে অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তির একটি ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করে। সেই ভার্চুয়াল ক্লোনের সঙ্গে টেক্সট, কল কিংবা ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করাও সম্ভব।
Delphi-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে তাদের পেইড গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১,৬০০। তাদের ক্লোনগুলোর অন্যতম বড় ব্যবহার হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য, যারা নিজেদের বক্তব্য, উপস্থাপনা, অফিস মেমো ইত্যাদি আপলোড করে এআই ক্লোন তৈরি করেন। পরে এই ক্লোনগুলো নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণে কিংবা টিমকে পরিচালনায় সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
নিজের ক্লোন সম্পর্কে টাইলার ডেঙ্ক জানান, এটি শুধু তার লেখা নয়, বরং তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, পডকাস্ট ইন্টারভিউ এবং Beehiiv-এর সাপোর্ট ডকুমেন্ট দিয়েও প্রশিক্ষিত। তার ব্যক্তিগত নিউজলেটার Big Desk Energy (BDE)-এর গ্রাহকরা এখন এই DenkBot-এর মাধ্যমে সরাসরি তার পরামর্শ পেতে পারেন,বিভিন্ন লেখা ঘেঁটে খোঁজার ঝামেলা ছাড়াই।
Delphi-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও দারা লাজেভার্দিয়ান বলেন, “টাইলার এমন একজন উদ্যোক্তা, যাকে আমরা অনেকেই অনুসরণ করি। বিশেষ করে লেখক ও কনটেন্ট নির্মাতারা তাদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে আমাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন।”
Delphi-এর মতে, তাদের ক্লোনগুলো কেবল পরামর্শ দেওয়ার কাজেই নয়, সম্ভাব্য ব্যবসায়িক লিড খুঁজে বের করতেও সহায়ক। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে থাকা লাজেভার্দিয়ানের নিজের ক্লোন যখন কোনো এআই ইঞ্জিনিয়ার বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে কথা বলে, তখন তিনি সরাসরি একটি নোটিফিকেশন পান। ফলে তিনি সহজেই সম্ভাব্য নতুন কর্মী বা ক্লায়েন্ট খুঁজে নিতে পারেন।
তবে এমন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এজন্য Delphi শুরু থেকেই “হ্যালুসিনেশন গার্ডরেইল” বা ভুল তথ্য রোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছে। ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের ক্লোনের “ক্রিয়েটিভিটি স্কোর” নির্ধারণ করতে পারেন। স্কোর কম হলে ক্লোন কেবল প্রশিক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতেই উত্তর দেবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে, ক্লোন নিজেই ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে, যাতে সে নিজে উত্তর দিতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য ক্লোনটিকে আরও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
টাইলার ডেঙ্ক মনে করেন, “অনেক কনটেন্টের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করার যুগ শেষ হতে চলেছে। সামনে এর জায়গা নেবে এমন প্রযুক্তি, যা মুহূর্তেই সঠিক তথ্য আপনার সামনে তুলে ধরবে।”
এখন পর্যন্ত Beehiiv এবং Delphi-এর মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও প্রযুক্তিটি যে নিউজলেটার নির্মাতাদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, তা স্পষ্ট। বিশেষ করে যারা নিয়মিত পরামর্শমূলক কনটেন্ট তৈরি করেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক নতুন দিগন্তের সূচনা।
প্রসঙ্গত, Delphi-ই একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয় যারা এমন এআই ক্লোন তৈরি করছে। ২০২৪ সালের শেষদিকে MasterClass চালু করেছে On Call নামের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মার্ক কিউবান ও গর্ডন র্যামসের মতো প্রশিক্ষকদের এআই ভার্সনের সঙ্গে কথা বলা যায়। এমনকি রেস্টুরেন্ট চেইন Le Pain Quotidien-এর প্রতিষ্ঠাতা আলাঁ কুমঁ-রও একটি এআই ক্লোন চালু করা হয়েছে।
এমনকি গুগল সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কারও মৃত্যুর পর তার এআই ক্লোন কীভাবে কার্যকর হবে? সেই গবেষণায় এই ক্লোনগুলোকে বলা হয়েছে “জেনারেটিভ ভূত” একটি কৌতূহলোদ্দীপক ও আলোচনাসম্পৃক্ত নতুন ধারণা।
সূত্র:https://tinyurl.com/mry37hpc
আফরোজা