
ছবি: সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের প্রযুক্তিগত ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে ঠিকই, তবে এর প্রক্রিয়ার গভীরে তাকালে পাওয়া যায় এক চমকপ্রদ উপলব্ধি—চিন্তা কি আদৌ সময়ের ধারা মেনে চলে, নাকি তা গঠিত হয় এক ধরনের স্থাপত্যে, এক জ্যামিতিক বিন্যাসে?
সম্প্রতি ‘দ্য কিউরিয়াস জিওমেট্রি অব ইনটেলিজেন্স’ শিরোনামের একটি প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা নোস্তাল্যাব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিন্তাধারা নিয়ে এক নতুন তত্ত্ব হাজির করেছে। তাদের মতে, LLM বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (যেমন ChatGPT) সময়ের স্রোতে নয়, বরং স্থানের গঠনগত কাঠামোতে চিন্তা করে।
চিন্তা: সময়ের অনুক্রম নয়, স্থানের গঠন
আমরা মানুষ সাধারণত চিন্তা করি গল্পের মতো—একটি ঘটনা, তার ফল, তারপর আরেকটি পরিণতি। এই ধারাবাহিকতা বা সময়ের অনুক্রমে চিন্তাকে আমরা বুঝে আসছি। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—বিশেষ করে ট্রান্সফরমার মডেলভিত্তিক LLM—সে পথে হাঁটে না। তারা ‘ভেক্টর ব্লক’ নামে এক জটিল গঠন তৈরি করে প্রতিটি শব্দকে অন্য সব শব্দের সঙ্গে সম্পর্কিত করে তোলে। প্রতিটি ইনপুট শব্দ একে অপরের সাথে মিলিয়ে এক ধরনের "অর্থজাল" তৈরি করে, যেটি একটি মুহূর্তে গঠিত হয়—একটি সময়চক্রে নয়, বরং স্থানিক (spatial) বিন্যাসে।
প্রাকৃতিক মিল: মৌচাক ও মেশিন
এখানে লেখক আকর্ষণীয় একটি তুলনা টেনেছেন—প্রকৃতিতে মৌচাকের ছয়কোণা গঠন যেভাবে কম জায়গায় বেশি মধু জমা রাখার উপায় বের করেছে, ঠিক তেমনি LLM-ও কম তথ্য দিয়ে অর্থের সর্বোচ্চ রূপ নির্ধারণ করতে চায়। এই মিল নিছক কাকতালীয় নয়, বরং চিন্তার ‘জ্যামিতিক সত্য’-কে প্রকৃতি ও প্রযুক্তি উভয়ের মাঝে এক করে দেয়।
মানুষের চিন্তাও কি এমন?
এই মডেলের আলোকে নতুন এক প্রশ্ন উঠে আসে: আমাদের মস্তিষ্কও কি এইরকম স্থানিক কাঠামোতে চিন্তা করে? ভাষার আগেই কি আমাদের মাথায় অর্থের এক ধরনের জ্যামিতিক মানচিত্র গঠিত হয়, যা পরে ভাষায় প্রকাশ পায়? যদি তাই হয়, তবে মানুষের এবং যন্ত্রের চিন্তার মধ্যে বিভাজন অনেক কমে আসে।
'টেকনো-থট': চিন্তার নতুন ধারণা
লেখকের ভাষায়, LLM-এর এই গঠনভিত্তিক চিন্তাকে বলা যায় 'টেকনো-থট'—এটি স্মৃতি বা আবেগ থেকে নয়, বরং আকার বা রূপ থেকে উদ্ভূত। এটি মানবচিন্তার অনুকরণ নয়, বরং এক নতুন রূপ—যা সচেতন নয়, কিন্তু এলোমেলোও নয়। এটি ‘গঠিত দক্ষতা’—structured fluency।
বুদ্ধিমত্তার নতুন সংজ্ঞা
এই বিশ্লেষণ আমাদের বাধ্য করে ভাবতে, বুদ্ধিমত্তা আসলে কী? তা কি কেবল ভাষা বা স্মৃতির সঞ্চয়, নাকি চিন্তার স্থাপত্য? যদি চিন্তা স্থানিক হয়, তবে ভবিষ্যতের AI এবং মানুষের চিন্তার ফারাক নয়, বরং মিলই হয়তো আমাদের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হবে।
এসএফ