.
ইলেক্ট্রনিক স্পোর্টস সংক্ষেপে ই-স্পোর্টস। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, খেলাধুলা কিভাবে ইলেক্ট্রনিক হয়? মূলত, ইলেক্ট্রনিক স্পোর্টস বলতে পেশাদার স্তরে প্রতিযোগিতামূলক ভিডিও গেমিংকে বোঝায়। এতে সংগঠিত প্রতিযোগিতা জড়িত যেখানে খেলোয়াড় বা দলগুলো বিভিন্ন ডিভাইস যেমন কনসোল, মোবাইল বা কম্পিউটারের বিভিন্ন ভিডিও গেমে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই প্রতিযোগিতাগুলো বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা টেলিভিশন ইভেন্টের মাধ্যমে হতে পারে। এটিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কিছু গেম সিলেক্ট করে দেওয়া হয় এবং প্রতিযোগীরা তাদের ডিভাইসের সঙ্গে কানেকশনের মাধ্যমে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ই-স্পোর্টসের উৎস খুঁজতে হলে যেতে হবে ভিডিও গেমিংয়ের প্রথম দিকের দিনগুলোতে। যদিও এর উদ্ভাবক হিসেবে একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এখানে বেশকিছু মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান এর বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। ই-স্পোর্টসের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে ছিল ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালের প্রতিযোগিতামূলক গেমিং টুর্নামেন্টের আবির্ভাব। ১৯৮০ সালে আয়োজিত স্পেস ইনভেডারস চ্যাম্পিয়নশিপকে প্রথম বৃহৎ আকার গেমিং প্রতিযোগিতা হিসেবে ধরা হয়। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর শুরুর দিকে অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং শুরু হতে থাকে।
২০০০ সালে কোরিয়ান ই-স্পোর্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা এবং কোরিয়ান ই-স্পোর্টস প্রো লিগ দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক গেমিং দৃশ্যকে রূপ দিতে সাহায্য করেছিল। ই-স্পোর্টস বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য খ্যাতি অর্জন করেছে। যারা এই প্রতিযোগিতার পেশাদার অংশগ্রহণকারী তারা অত্যন্ত দক্ষ খেলোয়াড়। তারা তাদের দক্ষতা ধরে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে অনুশীলন করেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করেন। লাখ লাখ খেলোয়াড় এবং দর্শক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ইলেক্ট্রনিক স্পোর্টস ব্যাপারটি একটি শক্তিশালী ইকো সিস্টেম তৈরি করেছে, যার মধ্যে আছে দল, লিগ, স্পনসর এবং অতি উৎসাহী ফ্যানবেস। মূলত অনলাইনভিত্তিক প্রতিযোগিতা হলেও অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই বৃহৎ দর্শক আকর্ষণ করে এবং তারা নিজেদের প্রিয় দল এবং খেলোয়াড়দের জন্য উল্লাস করে। বিভিন্ন ধরনের গেমের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও কয়েকটি গেম আছে যেগুলো বেশ জনপ্রিয়। যেমন- লিগ অব লিজেন্ডস, ডোটা ২, কাউন্টার স্ট্রাইক, ফোর্টনাইট, ওভারওয়াচ, কল অব ডিউটি, হার্থস্টোন, রেইরবো সিক্স সিজ, রকেট লিগ, ভ্যালোরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখন একটি ই-স্পোর্টসের উদাহরণ দেওয়া যাক। লিগ অব লিজেন্ডস হলো একটি জনপ্রিয় মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন গেম, যেখানে একই গেমে দুটি দল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রতিটি খেলোয়াড় একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতাসহ একটি অনন্য চরিত্র নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রতিপক্ষ দলের বেস বা ভিত্তি ধ্বংস করতে কাজ করে। লিগ অব লিজেন্ডস একটি পেশাদার স্তরে সংগঠিত টুর্নামেন্ট এবং লিগ গুলির সঙ্গে খেলা হয়। এটির রয়েছে একটি বিশাল ফ্যানবেজ। বিশ্বব্যাপী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পেশাদার দল এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে সবচেয়ে বিশিষ্ট এবং সফল ই-স্পোর্টস শিরোনামগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ই-স্পোর্টসের হোস্ট যারা আছেন, তারা যথেষ্ট উৎসাহের সঙ্গেই প্রতিটি ইভেন্টের আয়োজন করেন। কারণ, সেগুলো যথেষ্ট লাভজনক।
দর্শক টানতে এই ধরনের ইভেন্টগুলোর জুড়ি মেলা ভার। সাধারণত খেলা প্রকাশক, ই-স্পোর্টসের সংস্থা, ইভেন্ট সংগঠক এবং অনেক সময় স্বতন্ত্র দলগুলোও এসব ইভেন্টের আয়োজন করে থাকে। প্রধান গেম প্রকাশক যেমন রায়ট গেমস, ভালভ করপোরেশন, ব্লিজার্ড এন্টারটেনমেন্ট প্রায়ই তাদের নিজস্ব টুর্নামেন্ট আয়োজন করে এবং স্পনসর করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বৃহৎ মাপের সংস্থাও এসব গেমের আয়োজন করে থাকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইন্টেল এক্সট্রিম মাস্টার্স, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। বিশ্বের শীর্ষ দল এবং খেলোয়াড়দের আকর্ষণ করার ক্ষেত্রেু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত গেমিং ইভেন্টগুলো। পেশাদার ই-স্পোর্টস সংস্থা এবং লিগ গঠন এই শিল্পকে আরও চালিত করেছে। ইলেক্ট্রনিক স্পোর্টস তরুণদের জন্য সম্ভাবনাময় একটি দিক। এতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কারণ খেলার জন্য তাদের কৌশলগত চিন্তা, দলগত কাজ, প্রতিফলন এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রয়োজন। নিয়মিত অনুশীলন তাদের সেই দক্ষতাকে বাড়ায়। ই-স্পোর্টস তাদের জন্য ক্যারিয়ারের সুযোগ তৈরি করে। যেমন এসব খেলাসংক্রান্ত কোচিং, দল পরিচালনা, ইভেন্ট অর্গানাইজিং, মার্কেটিংসহ এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। ই-স্পোর্টস ভৌগোলিক কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ না, তাই এর মাধ্যমে সহজেই নানা দেশের খেলোয়াড় এবং এই খেলার ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ই-স্পোর্টসের বেশ ভালো ইতিবাচক আর্থিক দিক রয়েছে।
এটির স্পনসরশিপ, বিজ্ঞাপন, পণ্য বিক্রয় এবং ইভেন্ট টিকিটিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রতিটি ইভেন্ট তাদের জন্য ব্যবসায়িক দিক থেকে বেশ লাভজনক হয়ে থাকে। পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও বিশেষ করে তরুণদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। এর লাইভস্ট্রিম বা সরাসরি সম্প্রচারও ব্যবসায়িক দিক থেকে বয়ে আনে সুফল। ই-স্পোর্টস প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও রাখছে ভূমিকা। এটির সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ইত্যাদি জড়িত, যা ক্রমেই দিন দিন গেমিংয়ের প্রয়োজনে উন্নত করতে হচ্ছে। ই-স্পোর্টস বৃদ্ধি পেশাদার লিগ, স্পনসরশিপ ডিল এবং খেলোয়াড়দের জন্য লাভজনক ক্যারিয়ার সুযোগ প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করছে। এটি মূলধারার মিডিয়া মনোযোগ আকর্ষণ করছে, সম্প্রচারক এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিযোগিতাগুলোর কভারেজ প্রদান করে। ডিজিটাল যুগে প্রতিযোগিতামূলক গেমিং এবং বিনোদনের ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করে ই-স্পোর্টস বিকশিত এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক তরুণ গেম ডেভেলপার আছে। তারা যদি সহযোগিতা করে ই-স্পোর্টসের অবকাঠামো গড়ে তোলে, তাহলে নিজেদের গেম তৈরি করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় এবং বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরা সম্ভব।