ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন

আইটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ১২ নভেম্বর ২০২২

স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইয়ান শাকিল এবং তার সহযোগী পেলু ট্র্যান

স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যার একটি হলো বেকার সমস্যা। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই বেকার থাকাটা দেশের উন্নয়নের পথেও একটি বড় বাধা। এই সমস্যা আরও জটিল হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ‘শিক্ষিত বেকার’-এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়। ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ তথা সিপিডির তথ্য অনুযায়ী দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪৬ শতাংশই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা!

অগমেডিক্স কী? সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক এই স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইয়ান শাকিল এবং তার সহযোগী পেলু ট্র্যান। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ডাক্তারদের রোগী দেখার কাজকে আরও সহজ করেছে এই স্টার্টআপ। যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারদের বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসাবিষয়ক বিবরণ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি সংরক্ষণ করতে হয়। রোগী দেখার সময় এভাবে তথ্য সংরক্ষণ ডাক্তারদের মনোযোগে যেমন ব্যাঘাত ঘটায়, তেমনি এই তথ্য প্রতিদিন ‘ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড’ বা ইএইচআর-এ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়ও।
এ সমস্যার সমাধান করতে অগমেডিক্স ডাক্তারদের দিচ্ছে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, যিনি ডাক্তারের হয়ে রোগীর যাবতীয় তথ্যের রেকর্ড লিখে দেবেন। ডাক্তার রোগী দেখার সময় গুগল গ্লাস ব্যবহার করবেন এবং তার ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সুদূর বাংলাদেশে বসেই সরাসরি ডাক্তারের চোখেই রোগীকে দেখতে পাবেন, কথোপকথন শুনতে পাবেন, ছবি তুলতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো লিখে রাখতে পারবেন। এ কাজটি যারা করেন তাদেরকে বলা হয় স্ক্রাইব।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা এবং ডোমিনিকান রিপাবলিক থেকে স্ক্রাইব হিসেবে অগমেডিক্সে কাজ করছেন অনেক তরুণ। কিন্তু এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশেই অগমেডিক্সের সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের জন্য অগমেডিক্স ব্যবস্থা করে অত্যন্ত কার্যকরী প্রশিক্ষণের। ৬ মাসের এ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় ৪ ধাপে একজন প্রার্থীকে স্ক্রাইব হিসেবে গড়ে তোলা হয়, যেখানে প্রার্থীর ইংরেজি ভাষা জ্ঞান, টাইপিং, প্রয়োজনীয় মেডিকেল বিষয়ক জ্ঞান, প্রযুক্তির ব্যবহার- সবকিছুর বিকাশ ঘটানো হয়। দেশে বিনিয়োগ ও দক্ষ জনবল সরবরাহে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অগমেডিক্স।

অগমেডিক্সের প্রশিক্ষণ ছাড়াও আইসিটি বিভাগে আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারি- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটসমূহের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে দেশে দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী তরুণ জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান।

বেকারত্ব দূরীকরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহেও অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকা থাকবে অগমেডিক্সের। আইটি খাত থেকে বাংলাদেশ যে আয় করে তার একটি বড় অংশই আসে আউটসোর্সিং থেকে। ২০১৯ সালে আউটসোর্সিং খাতে বাংলাদেশের আয় ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে। এই রেমিটেন্স প্রবাহে নতুন প্রণোদনা দিচ্ছে অগমেডিক্স। চিকিৎসা খাতে বিপিও ইন্ডাস্ট্রির পরিচয় করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জন্য আউটসোর্সিং থেকে  বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় এক দুয়ার খুলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কেবল ২০১৮ সালেই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৫ শতাধিক মানুষকে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দিয়েছে এবং প্রতিবছর এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশে অন্তত ৭ হাজার কর্মী প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অগমেডিক্স। যেহেতু ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি এর সব প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে পরিচালনা করতে চায়, তাই অনাগত দিনে হাজারো কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর এই ব্যাপক সংখ্যক দক্ষ জনবল নিশ্চিতভাবেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভারি করবে।
এছাড়াও অগমেডিক্সের প্রশিক্ষণ, নিয়োগ এবং অর্থনৈতিক দিকগুলোর প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এর গবেষণা দলে অ্যান্ড্রয়েড, জাভা, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কোয়ালিটি অ্যাসিউর‌্যান্স- সব ধরনের আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে, যাদের বড় অংশই বাংলাদেশী। এটি বাংলাদেশের আইসিটি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার এক বড় সুযোগও বটে। সব মিলিয়ে আইসিটি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সুযোগকে আরও বর্ধিত করছে অগমেডিক্স, এই খাতের উন্নতিকে নিয়ে যাচ্ছে এক নতুন উচ্চতায়।

আইটি প্রতিবেদক

×