
ছবি: সংগৃহীত।
নামাজ ইসলামের মৌলিক রুকন এবং প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ ইবাদত। পবিত্র কুরআনে ৮২ বার সালাতের গুরুত্বের কথা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন— “নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।” (সুরা নিসা, আয়াত ১০৩)
আবার হাদিস শরিফে সময়মতো সালাত আদায়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমলগুলোর একটি হচ্ছে ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করা। কিন্তু কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের নামাজ, রোজা এমনকি তওবাও কবুল হয় না। হাদিস শরিফে তাদের পরিচয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
১. পলাতক গোলাম ও স্বামীর অসন্তুষ্টি নিয়ে রাতযাপন করা নারী
আবূ উমামা (রা.) আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ৩ ব্যক্তি এমন যাদের সালাত বা নামাজ তাদের কানও অতিক্রম করে না (কবুল হয় না)। ১. পলাতক গোলাম, যতক্ষণ না ফিরে আসে (মালিকের কাছে)। ২. এমন নারী যে তার স্বামীর অসন্তুষ্টিতে রাত্রিযাপন করে। ৩. এমন ইমাম যাকে মুসল্লিরা অপছন্দ করে। (মেশকাত, হাদিস: ১১২২; তিরমিজি, হাদিস: ৩৬০)
২. মিথ্যা বলা ব্যক্তি
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার (রোজা) পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৭৮২)
৩. মদ পান
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- মদ পানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। তবে সে তওবা করলে আল্লাহ তা’য়ালা তার তওবা কবুল করেন। এরপর যদি দ্বিতীয়বার সে মদ পান করে তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে আবারও তওবা করে তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তার তওবা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তৃতীয়বার যদি সে মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করেন না। তবে যদি সে তওবা করে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করেন।
তবে চতুর্থবারের মতো যদি ওই ব্যক্তি মদপানে লিপ্ত হয় আল্লাহ তা’য়ালা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। আর এরপর যদি সে তওবাও করে আল্লাহ তা’য়ালা তার তওবা ককুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। এ সময় সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সা.) ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি? জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩৩৭৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৮৬২)
৪. গণক ও জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া ব্যক্তি
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি আররাফ (গণকের) কাছে গেল এবং তাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, ৪০ রাত তার কোনো সালাত (নামাজ) কবুল করা হয় না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৬২৭)
এই হাদিসগুলো আমাদের সতর্ক করে দেয়, শুধু বাহ্যিকভাবে ইবাদত করলেই হবে না; ইমান, নৈতিকতা ও চরিত্র বিশুদ্ধ না হলে ইবাদতের ফজিলতও হারিয়ে যেতে পারে। আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া ইবাদতের জন্য আন্তরিকতা, খাঁটি নিয়ত ও শুদ্ধ আচরণ অপরিহার্য।
নুসরাত