
ছবি: সংগৃহীত
বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক জীবনের একটি বাস্তবতা। তবে দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটলেও সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব কখনো শেষ হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, তালাকের পর সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে দুই পক্ষেই দেখা দেয় দ্বিধা ও বিভ্রান্তি। প্রশ্ন ওঠে—কে নেবে সন্তানের দায়িত্ব? ইসলামী শরীয়ত কী বলছে এ বিষয়ে?
ইসলামে সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে, তালাকের পর সন্তানের ভরণপোষণের (নফকা) মূল দায়িত্ব পিতার ওপর বর্তায়। সন্তানের খাবার, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা—সব ধরনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা পিতার কর্তব্য।
পবিত্র কোরআনের সুরা আল-বাকারা (আয়াত ২৩৩)-তে বলা হয়েছে: “পিতা কর্তব্য তার সন্তানদের খাবার ও পরিধান তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রদান করা।” এখানে ‘সক্ষমতা অনুযায়ী’ বলা হলেও তা দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নয়; বরং পিতাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেই হবে।
সন্তানের হেফাজত ও মায়ের ভূমিকা
তালাকের পর নাবালক সন্তানদের হেফাজত সাধারণত মায়ের কাছেই থাকে। তবে হেফাজতের দায়িত্ব আর ভরণপোষণের দায়িত্ব এক নয়। সন্তানের দেখভাল মা করলেও খরচ চালানোর দায়িত্ব বাবা’রই থাকে। যদি মা নিজে খরচ বহন করেন, তবে তিনি ইসলামী আইনের আলোকে পিতার কাছ থেকে তা আদায় করতে পারেন। প্রয়োজনে পারিবারিক আদালতের সাহায্য নেওয়া যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুসলিম পরিবারের সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতার ওপরই বর্তায়। আদালতের মাধ্যমে সন্তান বা মা—উভয়েই খোরপোষের জন্য আবেদন করতে পারেন।
সুতরাং, তালাকের পর সম্পর্কের রূপ বদলালেও সন্তানের প্রতি দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন আসে না। ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যা শুধু বৈবাহিক সম্পর্ক নয়, বিচ্ছেদের পরের পরিস্থিতিকেও ন্যায়, মর্যাদা ও মানবিকতার সঙ্গে পরিচালনার নির্দেশ দেয়। সন্তান যেন কোনোভাবেই অবহেলার শিকার না হয়, সেই বিষয়ে পিতা-মাতার উভয়কেই হতে হবে দায়িত্বশীল ও সচেতন।
আলীম