
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম মায়ানী শফিউল আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন বিরুদ্ধে। এছাড়া ছাদ ঢালাই ও কলাম ঢালায়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন এলাকাবাসী। অনেকাংশে কলামের রড় দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকাংশে পাথর খসে পড়ছে। কোন কোন কলামে ফাটল ধরেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে স্থানীয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ, ঠিকাদারের লোকজনের যোগসাজশে দায়সারাভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ করা হচ্ছে। তারা বলেন, ঢালাইয়ে ব্যববহার হচ্ছে ময়লাযুক্ত সাদা পাথর, ঝংধরা নিম্নমানের রড়, কাদামাটি মিশ্রিত ইট বালু দিয়ে দায়সারা কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রি ছিটিয়ে ছটিয়ে ফেলে রাখায় নষ্ট হয়েছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পরিবেশ।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন নিমাণকাজ পেয়ে ২০১৮ সালে কাজ শুরু করেন। ৩ তলা বিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণ কাজ ৮ বছরেও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্কুল কতৃপক্ষ ও অভিভাবকরা। কিছুদিন একটি টিনশেডে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ পাঠদান চললে বাতাসে ওই শেড উড়ে যায়। পরে হাইস্কুল কতৃপক্ষ থেকে একটি ৩টি কক্ষের ভবন নেন পাঠদানের জন্য। বর্তমানে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শ্রেণিকক্ষ সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এদিকে তড়িঘড়ি করে শেষ মূহুর্তে কাজ শেষ করতে ব্যবহার করছেন নিম্নমানের সামগ্রী।
উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক আশরাফ উদ্দিন জানান, নির্মাণকাজের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের ইট, সুরকি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখি নিম্নমানের রড, ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া চাদ ও কলাম ঢালাই হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে। উপস্থিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তাকে পেয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করবে ভেবে নিজের কাছেও ভয় হচ্ছে। আমরা চাই মানসম্মত কাজ। শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে পাঠদান করতে পারে যেন অভিভাবকরা সঙ্কায় না থাকেন।
শফিউল আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র পাল বলেন, ২০১৮ সালে কাজ শুরু করলেও ৭ বছরে তারা কাজ শেষ করতে পারেনি। নিম্নমানের কাজের কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন, গত ৭ বছরে থেমে থেমে কাজ করছে। এখন চলতি বছরে কাজ শেষ করার কথা তাদের। তাই তারা তড়িগড়ি করে জোড়াতালি দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার করে কাজ করছে। নিম্ন মানের কাজের কথা আসলে আমি বলা লাগবেনা আপনারা সরেজমিন গিয়েছেন আপনারাই দেখেছেন কাজের অবস্থা। বিগত ৭ বছর কচ্ছপ গতিতে কাজ করলেও এখন তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করতে চাচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব জানান, আমরা কোন নিম্নমানের কাজ করছি না। যা করছি আমরা উপজেলা প্রকৌশলীর পরিক্ষা করা। আমরা উনার থেকে এপ্রুভাল নিয়ে কাজ করছি। আপনারা উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেন।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রনি সাহা বলেন, এমন একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছে। মিস্ত্রির গাফিলতি আছে কিনা আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে অবশ্যই ক্ষতিয়ে দেখবো। ঢালাইয়ের কোন ক্রুটি থাকলে সেটা আমরা পূণরায় কাজ করার তাগিদ দিবো। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খেলার মাঠ দখল করে নির্মাণ সামগ্রি ফেলে রাখার কোন এখতিয়ার নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। আমাদের নির্দেশনা থাকবে যাতে তারা দ্রুত সেগুলো সরিয়ে নেয়।
আঁখি