ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

যেসব কাজে জীবনের সব কিছুতে বরকত নেমে আসে

প্রকাশিত: ২০:১৯, ১ জুলাই ২০২৫

যেসব কাজে জীবনের সব কিছুতে বরকত নেমে আসে

ছবি: সংগৃহীত।

জীবনে বরকত বা কল্যাণ আল্লাহ তাআলার এক মহান নেয়ামত। অনেক মানুষ দীর্ঘ জীবন, অর্থ-সম্পদ কিংবা পরিবার-সন্তান পেয়েও জীবনে প্রকৃত বরকত থেকে বঞ্চিত হন। আবার কেউ অল্প আয়ে, স্বল্প সময় বা সীমিত সুযোগ-সুবিধায় থেকেও অপার বরকত লাভ করেন। এর মূল রহস্য হলো—জীবনের কাজে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতের উপস্থিতি।

ইসলামের দৃষ্টিতে বরকত শুধু ধনসম্পদ বা দীর্ঘজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তা জীবন, সময়, আমল, সম্পর্ক, পরিবার ও প্রতিটি কাজের মধ্যে কল্যাণ ও পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে। কুরআন ও হাদিসে বরকত লাভের জন্য কিছু নির্দিষ্ট আমলের কথা বলা হয়েছে, যা পালন করলে একজন মুসলমান দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ পেতে পারেন।

নিম্নে বরকত লাভের ১০টি কার্যকর আমল তুলে ধরা হলো:

১. ঈমান ও তাকওয়া

আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং সব বিষয়ে তাঁকে ভয় করা বরকত লাভের অন্যতম মূল চাবিকাঠি।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম।” (সুরা আরাফ : আয়াত ৯৬)

২. যে কোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা

হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কেউ খাবার খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বললে শয়তান তাতে অংশ নিতে পারে না।”

অতএব, সব কাজে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করলে তাতে শয়তানের হস্তক্ষেপ রোধ হয় এবং আল্লাহর বরকত অবতীর্ণ হয়।

৩. কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা

কুরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন গড়লে জীবনে বরকত আসে।
আল্লাহ বলেন: “এটি একটি বরকতময় কিতাব, অতএব এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর।” (সুরা আনআম : আয়াত ১৫৫)

হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ এ কুরআনের মাধ্যমে অনেককে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন এবং অনেককে নিচে নামাবেন।” (মুসলিম)

৪. দান করা

দানের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি কিছু না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের অংশ দিয়েও দান করো।”

৫. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

রক্তের সম্পর্ক রক্ষা করা বরকতের বড় মাধ্যম। মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়দের প্রতি সদ্ব্যবহার এবং সহযোগিতা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও বরকত ডেকে আনে।

৬. সকালবেলা কাজ শুরু করা

হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ আমার উম্মতের সকালবেলার সময়কে বরকতময় করে দিয়েছেন।”
সুতরাং বরকত চায়লে দিন শুরু করা উচিত সকালবেলায়, অলসতায় নয়।

৭. নামাজ কায়েম করা

নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং পরিবারকেও নামাজে উৎসাহিত করা বরকতের অন্যতম প্রধান পথ।
আল্লাহ বলেন: “আপনি আপনার পরিবারকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এতে অবিচল থাকুন।” (সূরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)

৮. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও নির্ভরতা বরকত লাভের মাধ্যম। রাসুল (সা.) বলেন, “তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা কর, তবে তিনি যেমনভাবে পাখিকে রিজিক দেন, তেমনিভাবে তোমাদেরও রিজিক দেবেন।”

৯. ইসতেগফার করা

অর্থাৎ আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। সুরা নূহে আল্লাহ বলেন: “তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তোমাদের জন্য অজস্র বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান বৃদ্ধি করবেন।” (সুরা নূহ : আয়াত ১০-১২)

হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি ইসতেগফারকে অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার জন্য সকল সংকট থেকে উত্তরণের পথ করে দেবেন।”

১০. সালামের প্রচলন করা

আস্-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ—এই সালাম শান্তি, রহমত ও বরকতের দোয়া। পরস্পরের মধ্যে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে সমাজে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং নেমে আসে বরকত।

বরকত লাভের জন্য এই ১০টি সহজ ও কার্যকর আমল প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে নিয়মিতভাবে চর্চা করা উচিত। এ আমলগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি পার্থিব জীবনেও কল্যাণ পাবেন এবং আখিরাতেও আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভ করবেন।
 

সায়মা ইসলাম

×