ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

পটুয়াখালীর ডিসি প্রত্যাহার ও তদন্তের দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৯, ১৪ জুন ২০২৫

পটুয়াখালীর ডিসি প্রত্যাহার ও তদন্তের দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে প্রত্যাহার এবং দায়িত্ব গ্রহণ থেকে শুরু করে তার সকল কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ, পটুয়াখালী জেলা শাখা।

শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে শহরের ছোট চৌরাস্তা সংলগ্ন দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মহসীন ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ফাহিমসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তারা জেলা প্রশাসককে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা-বিরোধী ও দলবাজ আখ্যা দিয়ে তার প্রত্যাহার এবং দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী সকল কর্মকাণ্ডের সঠিক তদন্তের দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, “৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন পটুয়াখালীতে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এরপর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নানা অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছেন। এমনকি তিনি গোপন ক্যামেরায় একজন দলীয় প্রধানের বৈঠকের ভিডিও করিয়ে তা অন্য দলের একজন রাজনীতিবিদের কাছে সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একজন জেলা প্রশাসকের দায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন বিতর্কিত কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের জন্য অশনী সংকেত। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন—এই পরিস্থিতিতে একজন পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাকে দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার ও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি।”

উল্লেখ্য, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর তাঁর গ্রামের বাড়ি গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাসে আসেন। সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বুধবার (১২ জুন) রাতে চরবিশ্বাস ও চরকাজল ইউনিয়নে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সভায় স্থানীয় বিএনপিকে নিয়ে নুরের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

পরদিন বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে গলাচিপা পৌর শহরে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। সন্ধ্যায় চরবিশ্বাস বাজারে গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বিএনপি কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙচুর করা হয় এবং উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুরও ছিলেন।

ঘটনার সময় সাংগঠনিক কাজে উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায় অবস্থান করছিলেন নুর। সেখানে তাঁকে স্থানীয় বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিরাপত্তায় দিবাগত রাত ৪টার দিকে নুর গলাচিপা শহরে পৌঁছান।

বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয় ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। এই পরিস্থিতি তুলে ধরে শুক্রবার (১৩ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টায় সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভের ঘোষণা দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

পরিস্থিতি বিবেচনায় গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে। নুরুল হক নুর অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক বিএনপি নেতার পক্ষ নিয়ে তার সাংগঠনিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।

সানজানা

×