ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে: ইইউ রাষ্ট্রদূত

প্রকাশিত: ২২:২১, ৫ মে ২০২৫

সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে: ইইউ রাষ্ট্রদূত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর দেশকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তবে এর আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

সোমবার (৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ এসব কথা বলেন তিনি।

মাইকেল মিলার বলেন, “ইইউ মনে করে, রাজনৈতিক রূপান্তরের এ প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে কোনও চাপ দিচ্ছি না। আমাদের দৃষ্টিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিটি কাজ করছে। দেখা যাক কতটা ঐকমত্য গড়ে তোলা যায়।”

জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে সমর্থন করি, যা অত্যন্ত স্পষ্ট। এখন প্রয়োজন যারা অপরাধ করেছে, তাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনা। তবে এই প্রক্রিয়াটি হতে হবে একেবারে স্বচ্ছ।”

রাষ্ট্রদূত বলেন, “বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক সুবিধা নিশ্চিত করতে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চাচ্ছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নির্ধারণে কাজ করছি। সামনের নির্বাচন রাজনৈতিক রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে এবং সেই প্রক্রিয়ায় আমরা অংশীদার হতে আগ্রহী।”

জামায়াতে ইসলামির প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক ব্রাসেলস সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তারা সেখানে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও ইইউ’র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।”

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে মাইকেল মিলার জানান, “রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এই সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান চাই। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু সামরিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে আমরা প্রায় ৫০ কোটি ইউরো সহায়তা দিয়েছি, তবে বর্তমানে সেই সহায়তা কমছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার চেষ্টা করছি।”

মানবিক করিডোর গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উদ্বাস্তুরা যেখানেই থাকুক, আমরা যদি তাদের সহায়তা করতে পারি, তবে সেটা স্বাগত জানাই। তবে সীমান্তের ওপারে সহায়তা পাঠাতে হলে একটি কার্যকর চ্যানেল প্রয়োজন।”

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অর্থপাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইইউ নয়, বরং সদস্য দেশগুলোর নিজস্ব বিচার বিভাগ অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদন্ত করে। এজন্য যথাযথ প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হয়, আর পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।”

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সম্পর্কের ভিত্তি হবে মৌলিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। আমার জীবদ্দশায় ইউরোপের বহু দেশ কর্তৃত্ববাদ থেকে গণতন্ত্রে এসেছে—বাংলাদেশ এখন সে পথেই হাঁটছে। এটি একটি বড় সুযোগ—মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সুশীল সমাজকে গুরুত্ব দেওয়ার। আমরা চাই বাংলাদেশ অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করুক, যাতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো এখানে পানি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।”

আসিফ

×