
এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ রোডম্যাপ চান। অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেনো এতো সময়ক্ষেপণ করছে? এ নিয়ে জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা এবং জনগণের রায়কে অবহেলা করে বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করা হলে সেটি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতে মুখোমুখি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আমাদের দলীয় আদর্শ ভিন্ন হলেও আমাদের উদ্দেশ্য দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং জনগণের কল্যাণ সাধন। লাখো প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলাদেশ, ৭৫-এর ৭ নভেম্বরে আধিপত্যবিরোধী তাঁবেদার মুক্ত বাংলাদেশ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী বাংলাদেশ এবং ২০২৪-এর ফ্যাসিবাদবিরোধী বাংলাদেশ পেয়েছি। দেশের ইতিহাসে এমন প্রতিটি বাঁকে মানুষ কেনো অকাতরে জীবন দিয়েছিলেন?
তারেক রহমান বলেন, কি ছিল এই শহীদদের স্বপ্ন? শহীদদের স্বপ্ন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল তাদের আত্মত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি আমরা। ’৭১ আর ২৪-এর রাজনৈতিক বার্তাটি হলো- দিল্লির তাবেদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পিন্ডি ত্যাগ করেনি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতা এই বার্তাটি দিয়েছিলেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিরুদ্ধে সুকৌশলে আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা খেয়াল করছি কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে এমন একটি আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন একটি অপরাধ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকেই আনন্দ দেয়। অপরপক্ষে এটি গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য কিন্তু অপমানজনক।’
তারেক বলেন, বাংলাদেশের ৫৪ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন যদি আমরা দেখি ১৯৭১ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আর ২০২৪ সাল ছিল দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার। বাংলাদেশ নামক এই জাতি রাষ্ট্র্রে স্বাধীনতাপ্রিয় হাজারো লাখো শহীদের রক্তে লেখা স্মারকে ’৭১ আর ’২৪ এর রাজনৈতিক বার্তাটি হলো দিল্লির তাঁবেদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পিন্ডি ত্যাগ করে নাই।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতাও এই বার্তাটি দিয়েছিল। গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বাধীনতার বার্তাটি উপেক্ষা করে পলাতক স্বৈরাচার দীর্ঘ দেড় দশক স্বাধীন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ কখনো বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, পরাজিত তাঁবেদার অপশক্তি আর তাদের দোসররা আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটি হোক বাংলাদেশের আজ এবং আগামী দিনের বন্দোবস্ত।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র-রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং নাগরিকদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে এটি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নীতি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অবজ্ঞা করতে হয়, প্রলুব্ধ করে তাহলে সংস্কারের তাৎপর্যটা কি এটি বহু মানুষের প্রশ্ন।
তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এতো সময় ক্ষেপণ করছেন এ নিয়েও জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা এবং জনগণের রায়কে অবহেলা করে বিরাজনীতিকরণকে উৎহিত করা হলে সেটি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।
তারেক রহমান বলেন. রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন এবং পরিবর্তনে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে সক্ষম হবে না। তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রের পক্ষে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর নতুন করে আরও কমপক্ষে ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এবং গন্তব্য এক ও অভিন্ন। সেটি হচ্ছে দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগণের কল্যাণ সাধন।
তারেক রহমান বলেন, যে রাজনৈতিক দলটি গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম এবং বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদারী রাষ্ট্রে পরিণত করছিল তাদের এদেশের জনগণ কখনো মেনে নেবে না। তবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী বিতাড়িত স্বৈরাচার পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আমাদের সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদের নির্দেশনা হচ্ছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে এই পলাতক স্বৈরাচার জনগণের ভোট ছাড়াই তিনবার অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন করে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজ জানতে চায়, সংবিধান লঙ্ঘনের দায় অভিযুক্তদের আগামী দিনে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা নিয়েছে। ‘ব্লেইম গেইম’ দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার অবশ্যই আগামী দিনে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের আমি বলতে চাই, লুটপাট আর দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায়। স্থানীয় নির্বাচন পলাতক স্বৈরাচারের জন্য পুনর্বাসিত হওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ। তাই যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলেছেন হয়তবা তারা এই বিষয়টি এভাবে বিবেচনা করেননি। আমি অনুরোধ করব বিষয়টাকে এইভাবে বিবেচনা করার জন্য।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি রায় দিয়েছে যে, তারা এ দেশে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। ফলে জনগণই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় হচ্ছে- একটি ভোটের মাধ্যমে, অন্যটি রাজপথে তাদের অবস্থান জানান দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি গণঅভ্যুত্থান দেশে হয়েছে, সেখানে এ দেশের জনগণ মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগকে অস্বীকার করেছে। জনরোষে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপরে আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না- এ আলোচনা আসতে পারে না। তারা রাজনীতির নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছে। এখন তার আইনি বন্দোবস্ত কি হবে, কোনো প্রক্রিয়ায় তাদের রাজনীতি থেকে বের করব তা ঠিক করতে হবে। অতএব আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল অতি দ্রুত করা উচিত এবং তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কারের কথা সব রাজনৈতিক দলগুলোই বলছে। একটি মৌলিক সংস্কারের জায়গায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যার মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে। তা পরিবর্তন না হলে জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন হবে না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, যে আলোচনা নিয়ে রাজনীতি সামনে আগাচ্ছে, সেটা হলো- সংস্কার, নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিচার। এর কোনোটিই একে অন্যের বিরোধী নয় বরং এ তিনটির মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক রূপান্তর হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সবসময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করা প্রয়োজন। তা নাহলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যে চেষ্টা তা সম্ভব হবে না।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ খেলাফত মসজিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসনাত কাইয়ুম, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারী চৌধুরী প্রমুখ।
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে তারেক রহমান ॥ মহান মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে বিশাল শ্রমিক সমাবেশ করেছে বিএনপি। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুনির্র্দিষ্টভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রুপরেখা ঘোষণার দাবি জানান।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি মনে করে, সংস্কার ও নির্বাচন দুটি-ই প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উস্কে দিতে চায় বলে গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।
এ সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান স্বল্প মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন করুন। কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ ও সংশয় কেটে যাবে।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সুযোগ না পায় এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য মনে করে জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।
এ কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুপ্ত ভাবনা মনের আকাক্সক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
তারেক রহমান বলেন, গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তী যে সরকার গঠিত হয় তা অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না।
তারেক রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনোই আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা কিংবা নেওয়া উচিত কিনা এই মুহূর্তে সেই বিতর্ক আমি তুলতে চাই না।
তবে দেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ মনে করে করিডর দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে, সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি। তাই আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান কিংবা অন্য কোনো দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ, এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
তারেক রহমান বলেন, শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষকে উপেক্ষা করে কোনো রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না। একাত্তরে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আধিপত্যবাদ এবং তাবেদারমুক্ত বাংলাদেশ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ, ২০২৪ এর ৫ আগস্টের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেশের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে জনগণের একটি সুমহান আকাক্সক্ষা সেটি হচ্ছে একটি বৈষ্যমহীন, নিরাপদ, মানবিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
আজকে এই বিশেষ দিনে দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের গণতন্ত্র প্রিয় জনগণের প্রতি আহ্বান কোনো উসকানি কিংবা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত সকল শহীদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ থাকি। কারণ অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে পরাজিত পলাতক অপশক্তি যাতে আর পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়। এই ব্যাপারে সকলে সতর্ক ও সজাগ থাকুন।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সমাবেশ থেকে আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে সমস্ত সংস্কার যেগুলোতে একমত হয়েছে দলগুলো সেই সংস্কারগুলো ইমপ্লিমেন্ট করে দ্রুত নির্বাচনে ব্যবস্থা করেন। আর যেগুলোতে একমত হবে না সেগুলো পরবর্তী পার্লামেন্টে পাস করানোর ব্যবস্থা করেন।
মানবিক করিডা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইগনোর করে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না যেই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শ্রম বিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান প্রমুখ।