
ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান সময়ের আলোচিত লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সবর। দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে আলোচনা করতে দেখা যায়। এক অনুষ্ঠানে এবার দেশ ছেড়ে বিশে পাড়ি জমানো কারণ জানালেন তিনি। শুক্রবার (২ মে) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়, শহীদুল আলম গ্রেফতারের দিন সকালেই পিনাকীকে একটি ফোন আসে। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি নিজেকে ‘মেজর ফারহান’ পরিচয়ে পরিচয় দিয়ে তাকে ডিজিএফআই অফিসে আসতে বলেন। প্রথমে ভদ্রভাবে বলা হলেও, দ্বিতীয় ফোনে বেশ রূঢ়ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, অবশ্যই তাকে সেদিন সন্ধ্যার আগেই উপস্থিত হতে হবে।
পিনাকী বলেন, “আমি তখন আমার হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করি। তারা সবাই বলেন, আমি যেন কোনোভাবেই সেখানে না যাই এবং আত্মগোপনে চলে যাই।”
এরপর থেকেই শুরু হয় তার আত্মগোপন। প্রায় পাঁচ মাস তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকেন। এই সময় ডিজিএফআই তার বাসা ও অফিসে অভিযান চালায়। নির্বাচন শেষে তিনি নিজ বাসায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাসার সামনেই নজরদারি শুরু হয়। নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে তিনি বাধ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য জানান, ওই সময় তিনি গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টেশন প্রজেক্টে কাজ করছিলেন। তার অভিজ্ঞতায়, “ডিজিএফআই যাদের ডাকে, তারা অনেক সময় আর ফিরে আসে না। আমি স্বাভাবিকভাবেই মনে করেছিলাম, আমার সঙ্গেও হয়তো তাই ঘটবে।”
অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পিনাকী বলেন, “বাংলাদেশের এই দুর্দশার জন্য দায়ী দেশের এলিট শ্রেণি। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে এবং সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে।”
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ কখনো দেশের সম্পদ পাচার করেনি। বরং তারা বিদেশে শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠায়। এই সাধারণ মানুষই দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, যারা গার্মেন্টসে মেশিন চালায়, রিকশা চালায়, কৃষিকাজ করে, ভবন তৈরি করে।”
পিনাকীর ভাষায়, “এই এলিটদের তিনটি বড় ভয়—সম্মান হারানোর ভয়, মার খাওয়ার ভয়, আর সম্পদ হারানোর ভয়। আমি তাদের মারতে পারব না, কিন্তু আমি গালি দিই, যাতে অন্তত তাদের সম্মান হারানোর ভয়টা কাজ করে। যদি এই গালির ভয়েও তারা সঠিক পথে ফিরে আসে, তাহলে দেশ কিছুটা হলেও বদলাবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “না হলে এরা ১৮ কোটি মানুষকে দাসে পরিণত করে রাখবে। আর যারা মানুষের জীবনকে দাসত্বে পরিণত করে, তাদের গালিই প্রাপ্য।”
আঁখি