ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

উচ্চমূল্যে গম ক্রয়

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৫ জুলাই ২০২৫

উচ্চমূল্যে গম ক্রয়

বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর দরকষাকষিতে বিশেষ সুবিধা পেতে কিছুটা উচ্চমূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬-এর ৬৮(১) ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৭৬(২) মোতাবেক জি টু জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব গম কেনা হবে। প্রতি টন গম কিনতে ব্যয় হবে ৩০২.৭৫ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কিনতে ব্যয় হবে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। প্রতি কেজি গমের দাম পড়বে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দামের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম একটু বেশি কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, অবশ্যই দাম বেশি। এ গমে প্রোটিনের হার কিছুটা বেশি। যে উদ্দেশ্যে এ গম কেনা হচ্ছে বলে সরকার দাবি করছে, শুল্ক ইস্যুতে দেশটির সঙ্গে দরকষাকষিতে সহায়তা পাওয়া। একই সঙ্গে গম আমদানির উৎস বাড়ানো। 
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের নেগোশিয়েশন চলছে। সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো। দাম একটু বেশি হলেও অন্যদিক দিয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে। উপদেষ্টা মনে করেন, এ গম কেনার ফলে দরকষাকষিতে সহায়ক হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লবিষ্ট নিয়োগের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে লবিষ্ট নিয়োগ কতটুকু কাজে লাগবে, আমার জানা নেই। তবে লম্বা সময় নিয়ে কোনো নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে লবিষ্ট নিয়োগ করা হয়। সরকারি পর্যায়ের দরকষাকষিতে প্রকৃত অর্থে ব্যবসায়ীদের প্রবেশের সুযোগ নেই।
গত ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ৩৭ শতাংশের বদলে ৩৫ শতাংশ হবে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। আমরা জানতে পারি ‘যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ কমাতে সরকার দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের উদ্যোগ নিয়েছে। এই গম আমদানির সিদ্ধান্ত তারই অংশ।’ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আপাতদৃষ্টিতে গমের দাম বেশি মনে হলেও যদি শুল্ক সহনশীল মাত্রায় কমানো যায় তবে সেটাই হবে বড় বিজয়। এর আগে গত ২০ জুলাই খাদ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানিকারক সংগঠন ইউএস উইট অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এতে বলা হয়, আগামী পাঁচ বছর সরকার প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিযোগিতামূলক দরে ৭ লাখ টন গম আমদানি করবে। 
সূত্র জানায়, গত ২২ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২২ লাখ টনের কিছু বেশি গম আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে বেসরকারি খাতে এসেছে ১৭ লাখ টনের বেশি।  সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করা হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪ লাখ টন। ওই সময় সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নাবিল গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমদানিতে অংশ নেয়। সরকারি পর্যায়ে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি হয়েছিল ২০১৭ সালে। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি বা বেসরকারি কোনো পর্যায়েই গম আমদানি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সহজে প্রবেশ করাতে সরকারের বাণিজ্যিক সংলাপ কৌশল বেগবান হোক, এমনটিই আশা আমাদের।

প্যানেল/মো.

×