ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার

প্রকাশিত: ১৮:০২, ২৫ জুলাই ২০২৫

বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার

আমদানি-রপ্তানির সময় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিপুল অর্থ পাচার হয় বিদেশে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের প্রায় ৭৫ শতাংশই হচ্ছে বাণিজ্যের আড়ালে। পণ্যের গুণমান, পরিমাণ ও মূল্য হেরফের করে, নথি জাল করে, এমনকি ভৌতিক পণ্য দেখিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে বিদেশে। দেশে শুল্ক ও কর আদায় কম হওয়ার অন্যতম কারণও অর্থ পাচার। 
সম্প্রতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত এক গবেষণাপত্রে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্ব জিডিপির আনুমানিক ২-৫ বা ৮০০ বিলিয়ন থেকে ২ ট্রিলিয়ন ডলার পাচার হয়। এ ধরনের পাচার গরিব দেশগুলোর অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। 
গবেষণায় অংশ নেওয়া শতভাগ ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাইয়ের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ ব্যাংকের রয়েছে সনাতনী তালিকা যাচাই প্রক্রিয়া। ১০০ শতাংশ ব্যাংকের লেনদেনের নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার আছে। আমদানি-রপ্তানি মূল্য যাচাইয়ে তথ্যভাণ্ডারের সুবিধা নিতে পারে ৫০ শতাংশ ব্যাংক। নির্দিষ্ট একটি প্রশ্নের আলোকে ৩৭টি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবের ভিত্তিতে গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়। এতে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার মোকাবিলায় সুরক্ষা কাঠামোতে দুর্বলতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এ প্রবণতা বাংলাদেশকে মানি লন্ডারিংয়ের বৈশ্বিক ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে ফলে, রপ্তানিকারকদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে থাকে অত্যন্ত সুকৌশলে। শুধু নিয়ম মেনে চললেই পাচারকারীদের ধরা যাবে না। বাণিজ্যের আড়ালে এমনভাবে অর্থ পাচার হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে বৈধ মনে হবে। এদেরকে ঠেকাতে কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনের পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর অর্থ পাচারের ৯৫টি মামলা করেছে। যার সবই বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের ঘটনা। এই পাচারে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা। ২০০৯-২০১৮ সাল পর্যন্ত ভুল বাণিজ্য চালানের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়, যা মোট জিডিপির ২ শতাংশ। অন্যদিকে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এই অর্থ পাচার মূলত বস্ত্র, ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানির আড়ালে হয়েছে। অর্থ পাচারের জন্য বাণিজ্য চ্যানেল ব্যবহারের প্রধান কারণ। এ মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়া যায়, যা অন্য মাধ্যমে সম্ভব হয় না এবং নিরাপদও নয়। কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য যারা রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের অর্থ পাচার রোধে, রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্গানকে সজাগ নজর রাখতে হবে, তবেই লাভবান হবে বাংলাদেশ।
 

প্যানেল/মো.

×