ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জাঙ্কফুড

স্বাদের মোহে বিষ খাওয়া

লাবণী আক্তার কবিতা

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২২ জুলাই ২০২৫

স্বাদের মোহে বিষ খাওয়া

আপনার প্রিয় খাবার কী? একথা যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে ৮০ শতাংশ মানুষের উত্তর আসবে ফুচকা, ঝালমুড়ি, চানাচুর, বার্গার, পিৎজা, পাস্তা। কিন্তু কেউ এটা বলবে না যে আমার পছন্দের খাবার বিষ। পছন্দ তো দূরের কথা শুধু টেস্ট করার জন্য হলেও কেউ বিষ খেতে চাইবে না। কারণ বিষ খেলে এখনই মরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যারা বিষ খেতে চান না তারাই আবার জাঙ্কফুড নামের বিষ প্রতিদিন অল্প অল্প করে খান। 
WHO, Global Nutrition, IEDCR I ICDDR এর বিভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, প্রতি হাজারে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ, যা পায় ৭০০-৮০০ জন মানুষ নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে জাঙ্কফুড গ্রহণ করেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এটি পায় ৯০ শতাংশেরও বেশি। এই খাবারগুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন দেখেই যে কেউ এতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এজন্যই বাচ্চা এবং শিক্ষার্থীদের এই সকল খাবার গ্রহণ করতে বেশি দেখা যায়। জাঙ্কফুড বলতে ওইসব খাবারকে বোঝায় যা খেতে অনেক মজাদার কিন্তু কোনো পুষ্টিগুণ নেই এবং লবণ, চিনি, চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি। 
জাঙ্কফুডে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকলেও তা আমাদের কোনো কাজে আসে না। কারণ এই ক্যালরিতে কোনো পুষ্টিগুণ নেই। এসব খাবার খেলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনে কারণ এই অতিরিক্ত ওজনে আমাদের শরীরে কোনো শক্তি থাকে না উল্টো ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই সকল খাবারে ফাইবার থাকে না। ফলে আমাদের শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসকল খাবার অতিরিক্ত চিনি ও ফ্যাট থাকে যা মস্তিষ্কের নিউরো-সিগন্যালিং কমিয়ে দেয়। ফলে মনোযোগ শক্তি কমে যায়, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। এসব খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের দেহে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ত্বকে চর্মরোগ ও ব্রনসহ না সমস্যা দেখা দিতে পারে জাঙ্কফুডের মাত্রা অতিরিক্ত মশলা সরাসরি আমাদের কিডনি ও লিভার কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জাঙ্কফুড খেয়ে আপনি সাময়িক আনন্দ পেলে এটি আপনার ব্রেইনের দীর্ঘমেয়াদি ডোপামিন কমিয়ে দেয় ফলে আপনি ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারেন। Lancet Journal (২০১৯)-এর এক গ্লোবাল ডায়েট সম্পর্কিত এক গবেষণায় বলা হয়, নিম্নমানের খাবারের কারণে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যায়, যা ধূমপানের চেয়েও বেশি। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন শুধু সাময়িক একটু মজা নেওয়ার জন্য আপনি আপনার স্বাস্থ্য কে কত বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।
যুক্তরাজ্যে রাত ৯টার আগে যেকোনো প্ল্যাটফর্মে জাঙ্কফুডের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে (Junk Food Advertising Ban)। অস্বাস্থ্যকর খাবারে প্রমোশনাল অফার নিষিদ্ধ করা হয়েছে (Buy-One-Get-One-Free িনিষদ্ধ )। মেক্সিকোতে কোমল পানীয়ের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স বসানো হয়েছে (সুগার ট্যাক্স) এবং স্কুলে, কলেজের সামনে জাঙ্কফুড বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফ্রান্সে ‘Eat 5 fruits and vegetables a day’ ক্যাম্পেন চালু করা হয়েছে। 
বিভিন্ন দেশে জাঙ্কফুডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও আমাদের দেশে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে জাঙ্কফুডের সংখ্যা দিনে দিনে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই অবস্থায় কতিপয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, যত্রতত্র জাঙ্কফুড বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে, এর বিপরীতে তারা চাইলে সালাদ, ফলমূল বিক্রি করতে পারে।  জাঙ্কফুডের ওপর দেওয়া বিভিন্ন অফার নিষিদ্ধ করতে হবে। স্কুল, কলেজে এবং উন্মুক্তভাবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাতে হবে যাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পায়। 
জাঙ্কফুড হয়তো দেশ থেকে একেবারে নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয় কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। এরজন্য প্রয়োজন সরকারের সঠিক পদক্ষেপ এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি। তাই সবার উচিত সময় থাকতে নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
 
 
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্যানেল/মো.

×