ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ২২ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত

বিমান দুর্ঘটনা পৃথিবীর নানা প্রান্তেই ঘটে থাকে প্রতি বছর। কোনটি যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে, কোনটি আবহাওয়াজনিত কারণে তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে শোকের মাতম চলছে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্তের ঘটনায়, সম্পাদকীয় লেখার সময় নিহতের সংখ্যা ২৭-এ পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৭৮ জন। এ পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই কোমলমতি শিশু। এ শোক দেশবাসী কীভাবে বইবে? রাষ্ট্র বাবা-মাকে কী বলে সান্ত¦নার বাণী শোনাবে? আমাদের কোনো ভাষা নেই, যে ভাষায় আমরা শোকাহত পরিবারকে সান্ত¦না জনাব। নিহত শিশুদের বয়স ৫-১৩ বছরের মধ্যে।
প্রতিটি বাবা-মা সকাল বেলা সন্তানদের খাবার খাইয়ে পোশাক পরিয়ে আপন ব্যবস্থাপনায় স্কুলে পাঠান এবং নিজে কর্মস্থল যান। কেমন কাটছে এমন মা-বাবার সময়গুলো? তাদের মনের অবস্থা মাপার কোনো যন্ত্র নেই। হায়রে নিয়তি! কোথায় মৃত্যু হবে, আমরা কেউই জানি না। এখানে কি শুধু নিয়তিরই দায়? অন্য কারও দায় নেই। মেগাসিটি ঢাকার মতো তিলোত্তমা নগরীতে অন্তহীন সমস্যায় পথচলা নাগরিক জীবন। দুই কোটি মানুষের শহরের আকাশে প্রশিক্ষণ বিমান চালাতে হবে কোন যুক্তিতে? যে বিমান দিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়েছিল, সেটি প্রশিক্ষণের কতটুকু উপযুক্ত ছিল? প্রশ্নগুলোর জবাব জাতি জানতে চায়। এভাবেই প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় দেশের অজুত সম্ভাবনাময় সন্তানগুলো কিছুদিন পর পর পরপারে চলে যাবে, আর আমরা নিয়তির খেলা বলে হাত কঁচলাব!
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী চিকিৎসক মো. সায়েদুর রহমান জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে যারা আইসিইউ ও এইচডিউতে আছে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাজধানীর চারটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৮ জন। মৃতদের মধ্যে ২৫ শিশু এবং একজন পাইলট ও একজন শিক্ষক রয়েছেন। দুটি হাসপাতালে হতাহত বেশি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৮ জন ভর্তি আছেন। সেখানে ১৫ জনের মৃতদেহ ছিল। এছাড়া বার্নে ভর্তি ৪২ জন। স্বজনদের কাছে ২০ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ৬টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের ডিএনএ নেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে আমরা এক খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা জানতে পারি, ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমওইউ আছে। তাদের কাছে টেকনিক্যাল সহায়তার জন্য অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। তারা কেস সামারি পেয়েছেন। এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ব্যক্তিগতভাবে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে অবস্থান করছেন। এখানকার কেসগুলো দেখে পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন, যা আহত শিশুদের আরও উন্নত চিকিৎসা পেতে সহায়তা করবে এবং নতুন করে বাঁচার সম্ভাবনা জাগবে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি জানিয়েছে, নিহতদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ, আহতদের নির্ভুল তালিকা, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা, ক্ষতিপূরণ প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ প্লেন বাতিল ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সংস্কার। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ দুর্ঘটনার পেছনে সামরিক আমলাতন্ত্র দায়ী, নাকি নিয়তির নির্মম পরিহাস তদন্ত কমিটিকে তা খুঁজে বের করতে হবে। শুধু বিমান দুর্ঘটনা নয়, আর কোনো দুর্ঘটনাই যেন বাংলাদেশের কোনো মায়ের বুক খালি না করে, এমনটিই আশা আমাদের।

প্যানেল/মো.

×