
রাজধানীতে বাঁশের সাঁকো
বছর দেড়েক আগে এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রত্যেক রোগীর গড় খরচ প্রায় ১৯ হাজার টাকা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা মুগদা হাসপাতালের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে গড় ব্যয় যেখানে ২৪ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে তা আরও অনেক বেশি। এই ব্যয় সামলানো একজন শ্রমজীবী, নিম্নমধ্যবিত্ত বা সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কঠিন। এ রকম পরিস্থিতি দেখে ধারণা হয়, রোগটি এখন নাগরিক জীবনের জন্য শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই নয়, বরং এক বিশাল অর্থনৈতিক বোঝাও হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রত্যাশা, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
রাজধানীতে বাঁশের সাঁকো!
দুই পাশে আবাসিক এলাকা। মাঝে রামপুরা খাল। খালের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। খোদ রাজধানীতে গ্রামীণ আবহ। কয়েক বছর আগে আফতাবনগরে গিয়ে চমকে উঠেছিলাম এই বাঁশের সাঁকো দেখে। পরে জেনেছিলাম এখানে চার-চারটে বাঁশের সাঁকো আছে। লাখো মানুষের যাতায়াত ওই চারটি সাঁকো দিয়ে। এত বছরেও যে ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি, সেটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পড়ে জানলাম। সাংবাদিক আহমেদ ইউসুফের লেখায় উঠে এসেছে রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার জীবনচিত্র। জানলাম, বনশ্রী ও আফতাবনগরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
এ ছাড়া অন্তত ২০টি ছোট-বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। বনশ্রীতে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থাকায় আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এপারে আসতে হয়। রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগরকে দুই ভাগ করে বয়ে গেছে রামপুরা খাল। সময়ের সঙ্গে খালটির দুই পাশে নগরজীবনের বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু নির্বিঘœ যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। অবাক হতে হয় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন চারটি বাঁশের সাঁকো।
গত মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে দেখেন বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে চারটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এসব সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ দুই পাশে যাতায়াত করে। বনশ্রী ও আফতাবনগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অনেক শিক্ষার্থী এই সাঁকো ব্যবহার করেন। আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। তাই বাঁশের সাঁকোই ভরসা।
সাঁকোগুলো নড়বড়ে হওয়ায় প্রায়ই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সঙ্গে কিছুদিন পরপর সাঁকো মেরামতের কাজ হলে কিংবা ঝড়বৃষ্টিতে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতে নেমে আসে অসহনীয় ভোগান্তি। যদিও দেড় দশক ধরে এসব সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিটি করপোরেশন কিংবা সরকারের অন্য কোনো পক্ষ থেকে এর আগে কখনো সাঁকোগুলো মেরামত বা নির্মাণের কাজ হয়নি। সাঁকো ভেঙে গেলে বা মেরামতের প্রয়োজন হলে তা আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির উদ্যোগে করা হয়।
একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আফতাবনগরের বাসিন্দারা কেউ গাড়ি বা রিক্সা নিয়ে বনশ্রীর দিকে যেতে চাইলে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকোতে মানুষ হাঁটলেও সেটি নড়তে থাকে। বেশি আতঙ্কে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। যদিও বাসিন্দারা দেড় দশক ধরে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ। তিনি জানান, মানুষের কষ্ট দূর করতে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে সেতু। যেগুলোয় গাড়ি চলাচলের পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষ হাঁটতে পারবে। একটি ফুটওভার ব্রিজও (পদচারী সেতু) হবে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। দেখা যাক কবে শুরু হয়ে কবে নাগাদ শেষ হয়।
রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকার বাসিন্দাদের দেড় দশকের বেশি সময় ধরে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা চারটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। আধুনিক নগর-পরিকল্পনায় এমনটা ভাবাই যায় না। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অসুস্থদের দুর্দশা আমাদের নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টিই সামনে নিয়ে আসে। সিটি করপোরেশন দ্রুততার সঙ্গে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন করবে, এটাই চাইছি।
কথাসাহিত্যে নতুন প্রতিভা
এক নতুন লেখকের প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ পড়ে (২০২৩) তাঁর নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। লিখেছিলাম: বন্ধুরা জানেন, সাহিত্যের প্রকৃত প্রতিভা শনাক্তে আমার কিঞ্চিত প্রতিভা আছে। সুদীর্ঘ সম্পাদনা সূত্রে এটি সহজাত নাকি অর্জিত, আমি জানি না। আমার ধারণা, বাংলাদেশ একজন ভালো মানের গল্পকারকে পেয়ে গেছে। এইমাত্র সমকাল ঈদসংখ্যায় এই লেখকের গল্প শেষ করে গত বইমেলায় গড়ে ওঠা আমার ধারণাটি আরও পোক্ত হলো।
আপনারা কি অনুমান করতে পারেন, আমি কার কথা বলছি?
সঠিক অনুমান প্রকাশ করেছিলেন প্রবাসে বসবাসকারী লেখক একমাত্র লুনা রুশদীই। সেই প্রতিভাবান গল্পকারের নাম উম্মে ফারহানা। তিনিই গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাতে পেলেন জীবনের প্রথম সাহিত্য পুরস্কার ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (২০২৩)। প্রথম বই ‘টক টু মি’ গল্পগ্রন্থের জন্য এ ‘তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার’ জিতলেন ফারহানা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তিনি।
উম্মে ফারহানা পুরস্কার গ্রহণ করে বললেন, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। কারণ পরিশ্রম করার ক্ষমতা তিনিই দেন। সবার উৎসাহ অনুপ্রেরণায় লেখা শুরু করেছিলাম। এ পুরস্কারপ্রাপ্তির পর এখন শিক্ষকের পাশাপাশি নিজেকে লেখক হিসেবেও পরিচয় দিতে পারব। সারাজীবন লিখে যেতে চাই।
ফিরে দেখা জুলাই ২০২৪
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। গত বছর এ সময়টা ছিল উত্তাল। ‘ঢাকার দিনরাত’ কলামে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা বিষয়ে কী লিখেছিলাম, একটু ফিরে দেখা যাক। ‘ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতা, কাটছাঁট সংবাদপত্র’ উপশিরোনামে লিখেছিলাম : ‘কোটা আন্দোলনের এক পর্যায়ে সহিংসতা শুরু হলে এবং সংঘর্ষে আহত-নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হতে শুরু করেন। এ পর্যন্ত তিনজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আহতের সংখ্যা অনেক। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকি থাকে, অপরাধী ব্যক্তি বা পক্ষ চায় না তাদের কর্মকা- সবিস্তারে গণমাধ্যমে আসুক, তাদের ছবি ছাপা হোক। এ তো গেল স্বাভাবিক সময়ের হিসাব।
কিন্তু যখন কোনো আন্দোলন শুরু হয়, মিছিল, সংঘাত এমনকি সহিংসতা শুরু হয়, সে সময়ে সাংবাদিকতা সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়, অর্থাৎ সাংবাদিক আক্রান্ত হন, নিহত-আহত হন। এটিই বাস্তবতা। ঢাকায় গত কয়েকদিনের আন্দোলনে আমরা সেটাই প্রত্যক্ষ করলাম। আমাদের জনকণ্ঠের মোট তিনজন সাংবাদিক (এদের একজন ফটোসাংবাদিক) কোটা সংস্কার আন্দোলন সংক্রান্ত সংঘাতের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা নিয়ে আলাদা উপশিরোনামে লিখছি। জায়গাটি ক’দিন ধরে যাত্রাবিরতি বলব না, যাত্রানাস্তি হয়ে উঠেছে। রীতিমতো রণাঙ্গন ছিল ওই এলাকা। সেখানেই প্রথম সাংবাদিক নিহত হন। নিহত সাংবাদিক কাজ করতেন ঢাকা টাইমস অনলাইন পোর্টালে। সেটি গত বৃহস্পতিবারের কথা। আরেকটি পত্রিকার গাজীপুরের প্রতিনিধি শাকিল হোসেন ঢাকায় এসে একই দিন নিহত হন।
ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের আহত-নিহত হওয়া প্রসঙ্গে এ কলামে কিছু লিখছি না। কালের কণ্ঠ, প্রথম আলো, মানবজমিনসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন, হেনস্তাও হয়েছেন। সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। সংবাদপত্রবাহী তিনটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিকরা কেন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হবেন? তারা যদি সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন না করেন, তাহলে দেশের মানুষ দেশের খবর জানবে কিভাবে? সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রসঙ্গটি আবারও এই কলামে জানিয়ে রাখলাম।
বলা দরকার, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনলাইন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ, সংবাদপত্রের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো, সব ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা ই-মেইল করে, বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতিবেদন ও ছবি পাঠাতেন। কিন্তু অনলাইন বন্ধ হওয়ায় সে পথও শাটডাউন। বর্তমানে যদি ফ্যাক্সের প্রচলন থাকত, তাহলে সেভাবে লিখিত রিপোর্ট পাঠানো যেত।
শেষ পর্যন্ত একটাই পথ ছিল খবর পাঠানোর, সেটি হলো টেলিফোন। কিন্তু ফোনে বিস্তারিত দীর্ঘ সংবাদ গ্রহণ ঠিক সুবিধাজনক নয়। যাহোক, বাধ্য হয়ে জনকণ্ঠসহ বেশকিছু সংবাদপত্র ১৬ থেকে ১২ পৃষ্ঠায় নেমে এসেছে সাময়িকভাবে। একটি সংবাদপত্র দেখলাম রবিবারে মাত্র আট পৃষ্ঠা বেরিয়েছে।’
রাজনীতির নিয়ম বদল
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি। আমরা খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি। খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে শনিবার বগুড়ায় পথযাত্রা ও পথসভা করে এনসিপি। সেখানে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
ফুটবলে ইতিহাস গড়লো মেয়েরা
দেশবাসী জানেন, ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। মিয়ানমার জয় করে রোববার রাতে স্বদেশে ফেরেন নারী ফুটবলাররা। বাছাইপর্ব পেরিয়ে প্রথমবারের মতো তারা জায়গা করে নিয়েছেন মেয়েদের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে। এএফসি এশিয়ান কাপে প্রথমবারের মতো খেলার যোগ্যতা অর্জন করা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। রোববার রাত ৩টার পর হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারে তাদের এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এর এক ঘণ্টা আগে দেশে ফেরেন আফিদা-ঋতুপর্ণারা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সেখান থেকে নারী ফুটবল দলকে সরাসরি হাতিরঝিলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৩টা ১৫ মিনিটে তারা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
মঞ্চ আর গ্যালারি পানির ওপর। সে এক ভিন্ন পরিবেশ। মধ্যরাতে এমন আয়োজনের পেছনে রয়েছে সময়ের সীমাবদ্ধতা। দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমা কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার ভোরেই ভুটানে পাড়ি জমাবেন। আরও তিনজন ফুটবলারও যাবেন দুদিন পর। তাই পুরো দল একসঙ্গে পেতে রাতেই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাফুফে।
৭ জুলাই ২০২৫
[email protected]
প্যানেল হু