
সম্পাদকীয়
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, দখল-চাঁদাবাজি, খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা, যা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মেগাসিটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি অপরাধ ঘটছে। চলতি বছর মে মাসেই সারাদেশে ২ হাজার ৮০৯টি মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়। গত ৯ মাসে শুধু রাজধানীতে ১৪৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খোদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি উতরে দেশের আইনশৃঙ্খলা উন্নতির দিকে গেলেও হঠাৎ করে সৃষ্ট নাজুক পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এর কারণও ছিল, মাঠপর্যায়ে পুলিশের বিশাল কর্মীবাহিনীর মনোবল হারানো ও কাজে অমনোযোগী ভাব। সারাদেশে অপরাধ কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত ছিচকে সন্ত্রাসী ছাড়াও পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের দোসরদের যোগসাজশ রয়েছে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক ভোল পাল্টানো সম্প্রদায়, যারা রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝে পাল তুলে থাকে।
এখানে শেষ হলেও হতো, কিন্তু না! অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও, যা গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। রক্ষকই যদি ভক্ষক হন, তবে জনগণ যাবে কোথায়? এতে জনজীবনে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোনো কোনো ঘটনায়, পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারও করতে পারছে না। তবে ডিএমপি দাবি করেছে, দু-একটি ঘটনা ছাড়া সব মামলার রহস্য তারা উদঘাটন করতে পেরেছে। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, পুলিশের এই ব্যর্থতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ।
দেশে গত ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলের শাসনকালে কমবেশি ‘মব সংস্কৃতি’ চলমান ছিল, কিন্তু জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের রেশ যেন এখনো কাটছে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে, জনগণ এতটাই অনিয়ম ও অবিচারের মুখোমুখি হয়েছে যে, জনগণের এখন ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে। তারা মনে করছেন, সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে কখনই আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
সমাজে শৃঙ্খলা ফেরাতে, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের কার্যকর ভূমিকার মাধ্যমে জনগণকে আস্থায় নিয়ে আসতে হবে, তবেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার ‘অপসংস্কৃতি’ বন্ধ হবে আশা করা যায়। সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে, রাষ্ট্র হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না, বহির্বিশ্বের কাছে আমরা অসভ্য জাতি হিসেবে চিহ্নিত হব।
অপরাধের মাত্রা কোন পর্যায়ে গেছে যে, লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্স থামিয়ে ডাকাতির মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনাও ঘটেছে। শিশুকন্যা থেকে বৃদ্ধা কেউই ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দেশে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, ৬ আগস্টে পটপরিবর্তনের পর, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। কঠোর হস্তে এটি বন্ধ করা উচিত। প্রায়ই চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর নজরদারি করতে হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ সমাজ কাঠামোয় শান্তি ও স্থিতি স্থাপনে।
প্যানেল হু