ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সপ্তাহান্তের সহ্যপরীক্ষা

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২৩ মে ২০২৫

সপ্তাহান্তের সহ্যপরীক্ষা

প্রায় দুই কোটি মানুষের চাপ, লাখো বিচিত্র যানের চাপ এবং বায়ুদূষণ, শব্দদূষণে ভারাক্রান্ত রাজধানীতে বৃহস্পতিবার আসে যথানিয়মে; ঢাকাবাসীর মনে বেজে ওঠে মিশ্র অনুভূতির ডঙ্কা। একদিকে ছুটির অবকাশ পাওয়ার আনন্দ, অন্যদিকে দিনভর, এমনকি মধ্যরাত অবধি বিবিধ যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতালাভ। বলাবাহুল্য, সব কর্মজীবীরই দুটো দিন বন্ধ নয়, তবে সরকারি কর্মচারী, বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর জন্য থাকে সপ্তাহান্তে শুক্র ও শনিবার এ দুদিন ছুটি উপভোগের স্বস্তি। ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু দুদিন বন্ধ থাকে তাই সকল অর্থকরী কর্মকাণ্ডই কিছুটা আলস্যের সুযোগ পায়। তবে এবারের ছুটি দুদিন নয়, শনিবার বিশেষ আদেশে সব অফিস খোলা, কেননা ইতোমধ্যে সরকার আসন্ন কোরবানি ঈদের ছুটি দশদিন ঘোষণা করেছে, যা ইতিহাসে একটি রেকর্ডই স্থাপন করেছে। যাহোক, আসা যাক, বৃহস্পতিবার তথা সপ্তাহান্তের প্রসঙ্গে।
রসিকজনেরা এরইমধ্যে বৃহস্পতিবারকে বেহুঁশপতিবার বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেদিন রাজধানীবাসীর বেহুঁশ দশাই হয়। ঢাকার যানজট মহাবিখ্যাত, যা চূড়া ছোঁয় সপ্তাহান্তে। শুধু ঘরে ফেরা নয়, ঢাকার বাইরে যাওয়ার তাড়া থাকে, শুক্র-শনিবার কাজ হবে না বা কর্মসম্পাদন অনিশ্চিত। তাই বৃহস্পতিবারেই কাজ সারা চাই। সব মিলিয়ে অতিব্যস্ততা, অতি ছোটোছুটির দিন ওদিন। কিন্তু বাংলা প্রবাদ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে আন্দোলন-নগরী ঢাকা বৃহস্পতিবার মহাআন্দোলিত হয় আন্দোলনে। এসবের সঙ্গে সংগত করতেই যেন বৃষ্টি ঝরতে থাকে। আর কে না জানে, ঢাকায় বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা, সমূহ বিপদ ও বিরক্তিকর বিড়ম্বনা।
বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ভাগে হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগে দুই ঘণ্টারও বেশি। কর্মসূচি-বৃষ্টি-জলাবদ্ধতার সঙ্গে যানজটে কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানী। শপথ গ্রহণের প্রতীক্ষারত মেয়রের সমর্থকরা আগের দিনই গুলিস্তান থেকে শুরু করে হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন-সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। এক পর্যায়ে তারা যমুনার পাশে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। ফলে সকাল থেকেই পুরো এলাকায় যানচলাচল ছিল বন্ধ। সেই সঙ্গে শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগে সড়কে অবস্থান নেয় ছাত্রদল। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে প্রায় পুরো রাজধানীতে। সব মিলিয়ে ঢাকাবাসীর কাছে সদ্যপেরুনো বৃহস্পতিবার ছিল নিদারুণ কষ্ট ও দুর্ভোগের।
সহ্যপরীক্ষায় নাকাল ঢাকাবাসীর মনের কথা হলো, আল্লাহর ওয়াস্তে দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তা দখলকারীরা সপ্তাহান্তের এই ব্যতিক্রমী দিন বৃহস্পতিবারকে রেহাই দিন। খুব ভালো হয় যদি ঢাকার রাস্তা অবরোধ করে রাখার জনদুর্ভোগমূলক পন্থা থেকে চিরতরে সরে আসতে পারেন।

প্যানেল

×