
পাবনার মিরাজ আফ্রিদি দুই হাত ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। শুরুতে ইউটিউব ও ফেসবুকে ভিডিও বানিয়ে তার এই আয়ের যাত্রা শুরু হয়। ইউটিউবে তিনি 'মিরাজ আফ্রিদি' নামে পরিচিত হলেও তাঁর পুরো নাম মিরাজুল ইসলাম। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত নেই। এক সময় সমাজে তিনি অবহেলিত ছিলেন।
মিরাজ আফ্রিদির বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে। তিনি কৃষক তোরাব আলীর ছোট ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তাঁর মা সূর্য খাতুন কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
২০১৯ সাল থেকে ফেসবুকে ভ্লগিং শুরু করেন মিরাজ। এর পর থেকেই আর আয় নিয়ে ভাবতে হয়নি। এখন তিনি আর কারও ওপর নির্ভরশীল নন, বরং নিজের আয়েই সংসার চালাচ্ছেন। সহকারীর সহায়তায় স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার ও তিনি মিলে দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে ভিডিও ব্লগ করেন। এসব ভিডিও থেকে তাঁর মাসে গড়ে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়, কখনো কখনো তা লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।
ফেসবুক ও ইউটিউবের আয়ের টাকা দিয়ে বর্তমানে পাবনা ও রাজশাহীতে দুটি ভিআইপি সেলুনের মালিক মিরাজ আফ্রিদি। তাঁর সেলুনে ১০–১৫ জন কর্মচারী কাজ করেন, যেখান থেকেও তিনি উল্লেখযোগ্য আয় করেন।
কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া দুই হাতবিহীন এই ২৬ বছর বয়সী উচ্চশিক্ষিত যুবককে জীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই করতে হয়েছে। মিরাজ দুই পা দিয়ে লিখতে পারেন, চামচ দিয়ে খেতে পারেন, এমনকি রান্নাও করতে পারেন। তিনি ভ্লগিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
তার বেশিরভাগ ভিডিওতেই স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ঘটনা তুলে ধরা হয়। কখনো শ্বশুরবাড়ি, কখনো বাবার বাড়ি কিংবা ভ্রমণে গিয়েও ভিডিও করেন তিনি। মিরাজ-সুমাইয়া দম্পতির ঘরে রয়েছে এক কন্যাসন্তান।
ছোটবেলায় দুই হাত না থাকায় সমাজের অবহেলার শিকার হতে হয়েছে মিরাজকে। অনেকে ভিক্ষা করার পরামর্শও দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর পরিবার, বিশেষ করে মা সব সময় পাশে ছিলেন এবং ভালো কাজ করার উৎসাহ দিতেন। যাঁরা একসময় তাঁকে অবজ্ঞা করতেন, আজ তাঁরাই প্রশংসা করেন।
গ্রামের অসহায় শিশুদের বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য তিনজন মিলে একটি এতিমখানাও চালান মিরাজ। নিজের মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের জোরে দুই হাত না থাকা সত্ত্বেও তিনি এখন লাখ লাখ টাকা আয় করছেন এবং নিজেই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
মিমিয়া