ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাঁকো ভাঙে বারবার, ব্রিজ আসে না একবার

সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশিত: ০০:০৭, ২৪ মে ২০২৫

সাঁকো ভাঙে বারবার, ব্রিজ আসে না একবার

পঁচিশ বছর ধরে চলছে প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসের খেলা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চরখোর্দ্দা গ্রামের বুক চিরে বয়ে যাওয়া বুড়াইল নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতুর দাবি উঠেছে বহুবার। বারবারই মিলেছে আশ্বাস, কিন্তু আজও চোখে পড়েনি কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশপাশের অন্তত ২০ গ্রামের হাজারো মানুষকে।

তবে এবার আর আশ্বাসে ভরসা রাখতে চায় না চরবাসী। তাদের সরল কিন্তু দৃঢ় উচ্চারণ—‘এবার আর কথা নয়, চাই কাজ। চোখের সামনে যেন দেখি নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।’

স্থানীয়রা জানান, গত দুই দশকে এ আসনে ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালে মাওলানা আবদুল আজিজ, ২০০৮ সালে কর্নেল আব্দুল কাদের খান, ২০১৪ সালে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন, ২০১৭ সালের উপনির্বাচনে গোলাম মোস্তফা আহমেদ, ২০১৭ সালের উপনির্বাচন ও ২০১৮ সালে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সকলেরই বক্তব্যে ছিল সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি একবারও।

চরখোর্দ্দা গ্রামের আমজাদ হোসেন (৬২) আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার জীবনেই ছয়জন এমপি দেখলাম। সবাই ব্রিজের কথা বলছে, কিন্তু বানাইছে কেউ না। আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি শুনতেই বুড়াইল পার হই।’

নামাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘এই একটা সাঁকো দিয়ে অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ চলাফেরা করে। খোর্দ্দা, ঘগোয়া, লাঠশালা, বৈরাগীপাড়া ছাড়াও কুড়িগ্রামের বজড়া, গুনাইগাছ, চরবিরহীম, সাধুয়া, দামারহাট, নাগড়াকুড়া, থেথরাসহ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করে।’

বাবর আলী (৬০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাঁকো ভাঙলেই সাংবাদিক আসে, ছবি তোলে, ভিডিও করে। কিন্তু সেতু আর আসে না। এখন তো সাংবাদিক দেখলেই বিরক্ত লাগে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়াইল নদীর ওপর বাঁশ ও কাঠের তৈরি একটি সাঁকোই এখানকার একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করছেন। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে সাঁকোটি ভেঙে পড়ে যায়। তখন চাঁদা তুলে নিজেরাই মেরামত করেন স্থানীয়রা। কখনো সখনো ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কিছু সহায়তা আসে।

এ পর্যন্ত সাঁকো থেকে পড়ে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, আহত হয়েছেন অনেকেই। এমনকি একবার এক পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলসহ নদীতে পড়ে গিয়েছিলেন বলেও জানান স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী বলেন, ২০০১ সালের তিস্তার ভাঙনের পর বুড়াইল নদীর চরিত্র পাল্টে যায়। এক সময়ের সরু খাল এখন তিস্তার শক্তিশালী শাখা নদীতে রূপ নিয়েছে। অথচ আজও হয়নি একটি পাকা সেতু।

তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনও রয়েছে। এখন শুধু বরাদ্দের অপেক্ষা। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বরাদ্দ পেলেই তারাপুর ইউনিয়নের বুড়াইল নদীর ওপর সেতু নির্মাণে কাজ শুরু করব।’

নুসরাত

×