
শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে শুক্রবার মঞ্চস্থ কমলা রঙের বোধ নাটকের দৃশ্য
মঞ্চনাটক সবাইকে টানে না কিংবা সবার ভালো লাগে না। তাই বলে মঞ্চনাটকের দর্শক নেই, সেটাও বলা যায় না। সেই সুবাদে থিয়েটারের রয়েছে বিশেষ শ্রেণির দর্শক। মঞ্চে আসা ভালো কোনো কাজ দেখার জন্য তারা মুখিয়ে থাকে। এই নাট্যপ্রেমীদের জন্য দারুণ একদিন ছিল শুক্রবার। এদিন তিনটি নাট্যদলের পৃথক তিন প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয়েছে রাজধানীর তিন নাট্যমঞ্চে। আর এই তিন নাটকের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রযোজনা ‘পাখিদের বিধানসভা’।
নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে। থিয়েটার ফ্যাক্টরির নাটক ‘কমলা রঙের বোধ’। অন্যদিকে বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে পরিবেশিত হয়েছে নাট্যদল এথিকের নয়া নাটক ‘সুড়ঙ্গ’। এই তিন নাটকের মধ্যে কমলা রঙের বোধ নাটকটির কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনাখ্যান উঠে এসেছে এ নাটকের গল্পের গহিনে।
কমলা রঙের বোধ নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অলোক বসু। থিয়েটার ফ্যাক্টরির পঞ্চম এ প্রযোজনা প্রসঙ্গে অলোক বসু বলেন, জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে এর আগে কখনো কোনো মঞ্চনাটক হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তাছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ পাঠক ও সাহিত্যানুরাগী রবীন্দ্রনাথ, নজরুল সম্পর্কে যত বেশি জানে, জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে ততটা জানে না। অথচ তাদের সমসাময়িক ও কালজয়ী এক সৃজনশীল লেখক জীবনানন্দ দাশ। সেই তুলনায় তার পরিচিতি অনেক কম। তাকে নিয়ে যারা চর্চা করেন, তারা জানেন জীবনানন্দ দাশ কত বড় শক্তিশালী একজন সৃজনশীল মানুষ। সেই বাস্তবতায় নতুন প্রজন্মের কাছে জীবনানন্দ দাশের সাহিত্য কীর্তিকে মেলে ধরা এই নাটকের মূল উদ্দেশ্য। নাটকে আজকের তরুণ প্রজন্মের চোখ দিয়ে দেখা জীবনানন্দের সঙ্গে কবির সময় ও ভাবনার মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।
নাটকের আখ্যান রচিত হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সাহিত্যকর্মকে উপজীব্য করে। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর জীবনানন্দ দাশ ট্রাম দুর্ঘটনার শিকার হন। নাটকের গল্প শুরু সেখান থেকেই। ২২ অক্টোবর শম্ভুনাথ প-িত হাসপাতালে মারা যান কবি। ৯ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কবি তার চিন্তার জগতে মুখোমুখি হয়েছেন তার জীবন-স্বপ্ন-কল্পনা-দর্শন ও বাস্তবতার। তাঁর ‘লিটারারি নোটস’ (সাহিত্যের নোট)-এর মাধ্যমে আজকের জীবনানন্দ ও কাব্যপ্রেমী কতিপয় তরুণ উন্মোচন করেন জীবনানন্দ দাশকে।
কমলা রঙের বোধ নাটকে জীবনানন্দ দাশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিপু মাহমুদ, আরিফ আনোয়ার ও কেএম হাসান। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আশা আক্তার, বিপাশা সাইদ, মুনমুন খান, সুভাষ সরকার, আকলিমা আক্তার, শান্তনূর ইহসান দিগন্ত, হাসিবুল হক, মৃন্ময় চৌধুরী, নওরীন পাপড়ি, রবিউল ইসলাম রাজিব, শাইরা, সূর্য, প্রীতম প্রমুখ। ঠা-ু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় কস্টিউম ডিজাইন করেছেন মোহসিনা আক্তার। রমিজ রাজু সংগীতায়োজনে মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন শাকিল সিদ্ধার্থ। কোরিওগ্রাফি করেছেন আমিনুল আশরাফ।
অন্যদিকে শিল্পকলার নাট্যশালায় মঞ্চস্থ সুফি জীবন দর্শনের গল্পময় পাখিদের বিধানসভা নাটকটি লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান রহমান মৈশান। পরিকল্পনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের অংশ হিসেবে পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থী অভিনয় করেছেন এই নাটকে। মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে এথিকের প্রযোজনা সুড়ঙ্গ। বরেণ্য কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর সুড়ঙ্গ নাটক অবলম্বনে নির্মিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মিন্টু সরদার।