
ছবি সংগ্রহীত
প্রায় সারা দেশে কমবেশি চলছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক এখন শুধুই একটি শব্দ নয় বরং এক বাস্তব আতঙ্কের নাম। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় তখন জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। বিশেষ করে শিশু বৃদ্ধ ও অসুস্থরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। একটু অবহেলা এক মুহূর্তের অসচেতনতা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রয়োজন সময়োপযোগী প্রস্তুতি এবং সচেতনতা।
হিটস্ট্রোক মূলত তখনই ঘটে যখন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেলে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো বিকল হতে শুরু করে। এতে মাথাব্যথা দুর্বলতা বমিভাব শরীর ঝিম ধরে যাওয়া এবং কখনো কখনো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই এই লক্ষণগুলো অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সূর্যরশ্মি সবচেয়ে প্রখর থাকে। এই সময় বাইরে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাথা ঢেকে বের হতে হবে। ছাতা ক্যাপ সানগ্লাস ব্যবহার এবং হালকা রঙের ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরা খুবই জরুরি। বাইরে থেকে ফিরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়া অথবা গোসল করে শরীরকে ঠান্ডা রাখা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। শুধু পানি নয় ফলের রস ডাবের পানি ও ঘরের তৈরি শরবতও হতে পারে জীবনরক্ষাকারী উপাদান।
গরমে বাইরের খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। বাসি বা ফাস্টফুডজাতীয় খাবার পেটের সমস্যা তৈরি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই বাসায় রান্না করা সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবারই বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। দিনে একাধিকবার হাত মুখ ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরের জানালা খোলা রাখা যেন বাতাস চলাচল করতে পারে- এসব ছোট ছোট কাজই বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।
শিশু ও বৃদ্ধদের দিকে রাখতে হবে বাড়তি নজর। তাদের পানির চাহিদা পূরণ করা এবং নিয়মিত শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা খুব জরুরি। একই সঙ্গে গৃহকর্মী রিকশাচালক শ্রমজীবী মানুষদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। তাদের যদি পর্যাপ্ত পানি বিশ্রাম বা ছায়াযুক্ত পরিবেশ না থাকে তবে তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এই মানুষগুলোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের কর্তব্য।
আমরা অনেক সময় ঠান্ডা পানীয় বরফমিশ্রিত জুস কিংবা আইসক্রিমের প্রতি আগ্রহ দেখাই। ভাবি এগুলোই গরম থেকে মুক্তি দেবে। অথচ বাস্তবে এসব খাবার শরীরকে সাময়িক আরাম দিলেও অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর ও স্বাভাবিক উপায়।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেকে সচেতন রাখা এবং সেই সচেতনতার আলো চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া। পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব। এই গ্রীষ্মে ভয় নয়, চাই উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ প্রস্তুতি। সচেতনতাই হোক আত্মরক্ষার শক্তি। একটু যত্ন ও বাড়তি সতর্কতা হয়তো পারে অনেকের জীবন রক্ষা করতে, তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে। আসুন আমরা সকলে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতন হই নিরাপদ থাকি এবং অন্যকেও নিরাপদ রাখি।
প্যানেল