
বাংলার বুকজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী। এই নদীগুলোই আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা ও অর্থনীতির মূল ধারক। গাঙের ধারে মানুষের বসতি, নৌকা ভেসে চলে জীবিকার টানে, কিশোরের কণ্ঠে উঠে আসে গান ‘এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা সুরমা নদী তটে’। কিন্তু আজ সেই নদী কাঁদে। তার বুকে জমেছে বিষ, তার চলার পথ রুদ্ধ, আর তার কোলে ভেসে বেড়ায় প্রাণহীন দেহ।
একদিন যে নদী ছিল জীবনের আশ্রয়, আজ তা হয়ে উঠেছে মৃত্যুর মুখ। কারণ আমরা তাকে ব্যবহার করেছি, কিন্তু তার প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। শহরের ময়লা, কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, দখলদারদের লোভ- সব মিলিয়ে নদীর জল এখন কালো, মৃতপ্রায়। এই দূষিত নদীতে যেমন জলজ প্রাণের মৃত্যু, তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল। নাব্য কমে যাওয়ায় বড় বড় নৌযান চলছে ঝুঁঁকি নিয়ে, আর প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
আর এসব দুর্ঘটনার পেছনে আছে আমাদের অবহেলা, উদাসীনতা। বহু নৌযানে নেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা, নেই প্রশিক্ষিত চালক। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা, নৌকার সক্ষমতার বাইরে লোড বহন, ও জরাজীর্ণ যান ব্যবহার সব মিলিয়ে প্রতিটি যাত্রা যেন এক অনিশ্চিত গন্তব্যের গল্প।
‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ শুধু একটি উপলক্ষ নয়- এটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যদি নদীকে ভালোবাসি, তাহলে তাকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আমরা যদি চাই নিরাপদ যাত্রা, তাহলে আমাদেরই গড়তে হবে নিরাপদ নৌযান, মানতে হবে নিয়ম, বাড়াতে হবে সচেতনতা।
নদী শুধু পানি নয়, নদী জীবন। নদীর বুকে জীবন চলে, স্বপ্ন ভেসে বেড়ায়। দূষণমুক্ত নদী মানে সুস্থ পরিবেশ, নিরাপদ নৌযান মানে নিশ্চিন্ত যাত্রা। আমরা যদি আজই না জাগি, কাল হয়তো আর নদীই থাকবে না আমাদের সঙ্গে।
আসুন, দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌচলাচলের জন্য একসঙ্গে গড়ে তুলি সচেতনতার ঢেউ। জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি, নদীকে ফিরিয়ে দিই তার প্রাণ।
ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা থেকে
প্যানেল