ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

বন্ধ হোক দখল-দূষণ

নূর সালাম খান

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ১৪ মে ২০২৫

বন্ধ হোক দখল-দূষণ

নদী বাংলাদেশের প্রাণ। এদেশে হাজারের অধিক নদী এবং দশ হাজার কিলোমিটারের অধিক নৌপথ রয়েছে। এক সময় নৌপথই ছিল দেশে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। যদিওবা কালক্রমে সেটি সংকুচিত হয়েছে। তারপরেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম দেশ। এখনো এদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নৌপথে যাতায়াত করে। এদেশে একটি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট চারটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। বর্তমানে শতকরা ৮০ ভাগ পণ্য নৌপথে পরিবহন করা হচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব এই পরিবহন ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই নদীকে বাঁচাতে হবে। নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। নদীকে দূষণমুক্ত করতে হবে। মেনম্যাইড শিল্প কারখানার বর্জ্য, গৃহস্থালির বর্জ্য, পরিত্যক্ত আবর্জনা প্রভৃতি নদীকে দূষিত করছে। পলি জমে চর জেগে ক্রমাগতভাবে নাব্যতা হারাচ্ছে নদীগুলো। নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে বিআইডব্লিউটিএ এর মাধ্যমে গ্র্যাপ ড্রেজিং, হোপার ড্রেজিং কাযক্রম পরিচালনা করতে হবে। নদী শুকিয়ে যাওয়া মানে দেশের প্রাণ থেমে যাওয়া। নদীকে অবৈধ ও দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রশাসনের নাকের ডগায় রেজিস্ট্র্রেশনবিহীন বিপুলসংখ্যক বালুবাহী বাল্কহেড, স্পিড়বোটসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল করছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ। ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধ করা, নৌযানের রুট পারমিট ও লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের কঠোর মনিটরিং করা, মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বা পণ্যবোঝাই না করা, নৌপথের চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা , অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং ঘাট সমূহে চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া উচিত। প্রতিটি ঘাট ইজারা দেওয়ার সময় ইজারাদারের বরাদ্দপত্রে উন্মুক্ত স্থানে শুল্কহার টানানোর নির্দেশ থাকলেও তা মানে না। নৌপথে পণ্য পরিবহনে এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী জাহাজ থেকে অভ্যন্তরীণ নৌযান মালামাল লোড করার ক্ষেত্রে সিরিয়াল মানে না অনেক প্রভাবশালী শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তারা নির্ধারিত সময়ে পণ্য আনলোড না করে শত শত নৌযানকে ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেন। তাতে বাজারের কৃত্রিম পণ্য সংকট সৃষ্টি হয়। অলস বসে থাকায় লোকসান গুনতে হয় পণ্যবাহী নৌযানের মালিকদের। এসব নিয়ে সাধারণ নৌযান মালিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করে। কোথাও এমন আইন অমান্য হলে কিংবা যাত্রী হয়ানি হলে আইন অমান্যকারীকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। নৌনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণকে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাংলাদেশের নদীপথ অবৈধ দখলমুক্ত হোক, দূষণমুক্ত হোক। ব্যবসাবাণিজ্যে প্রাণচাঞ্চল্যে ফিরে পাক বাংলাদেশের নদীপথ এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
কিশোরগঞ্জ থেকে

প্যানেল

×