
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী শুধু জলপথ নয়, বরং দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবেশ ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে প্রায় ২৪,০০০ কিমি অভ্যন্তরীণ নদীপথের মধ্যে প্রায় ৬,০০০ কিমি নদীপথ সারাবছর চলাচলের উপযোগী। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য পরিবহন এই নদীপথেই সম্পন্ন হয়, যা নদীর গুরুত্বকে স্পষ্ট করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, নদীগুলো আজ মারাত্মক দূষণ ও দখলের শিকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকার আশপাশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নদীতে ফেলে দেয়। এর ফলে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বছরে গড়ে ৮৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নদীতে গিয়ে পড়ে। এসব কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে নৌযানগুলোও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছে। অনেক নৌযানে নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম, চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (ইওডঞঅ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এক দশকে ৫৫০টিরও বেশি নৌদুর্ঘটনায় প্রায় ১,২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষাকাল ও ঘন কুয়াশার সময় এ দুর্ঘটনার হার আরও বেড়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। নদীতে শিল্পবর্জ্য ও প্লাস্টিক ফেলা রোধে কঠোর নজরদারি চালাতে হবে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম চালাতে হবে। যাতায়াতের জন্য আধুনিক ও নিরাপদ নৌযান ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া এবং চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো এবং স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগেও জনগণকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।
সরকার, বেসরকারি খাত এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগেই সম্ভব একটি দূষণমুক্ত, নিরাপদ ও সচল নৌপথ গড়ে তোলা। ফলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে, নৌবাণিজ্য উন্নত হবে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
লালমাই সরকারি কলেজ, কুমিল্লা থেকে
প্যানেল