
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল- এ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে জল আমাদের জন্য কতটা উপকারী। এই জল বিস্তৃত বিভিন্ন খাল-বিল, নদ-নদী, পুকুর-দিঘিতে। তার মধ্যে বাংলাদেশে শুধু নদী রয়েছে হাজারের ওপরে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এক সময় রাজা-বাদশারা নদী পথে বেশ চলাচল ও ব্যবসায়িক কাজ করতেন। কৃষকরা নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতেন। রেলপথ ও সড়কের মত যান চলাচলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম নদীপথ। নদীপথে দ্রুত পরিবহন করা যায়। এখানে সড়কের মত জট নেই। দেশের ভেতরে পণ্য পরিবহনে নদী পথ বিকল্প হিসেবে কাজ করে। নদীতে রয়েছে আলাদা প্রশান্তি। নদীপথে চলাফেরা করে যতটা স্বচ্ছন্দ্যবোধ অন্য মাধ্যমে ততটা নেই। তবে বিগত কয়েক বছর যাবত আমরা নদীপথের এতটাই সুবিধা নিয়েছি যে, নদীগুলো বর্তমানে ধ্বংসের পথে। এখানে যততত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, কলকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন করা, নদী কেটে বালি উত্তোলন করা, নিরাপদহীন নৌযান ব্যবহার করা। যার কারণে মূলত নদীর নাব্যতা কমছে। নৌযান সঠিকভাবে চলাচলের জন্য নদীর নাব্যতা প্রয়োজন। যে নদী যত গভীর তার গতিপথ তত সূক্ষ্ম। সে নদীতে নৌকা, জাহাজ, লঞ্চ চলাচল করতে পারে নির্বিঘ্নে। প্রাণী ও জীবের মত নদীরও প্রাণ আছে। নদীর প্রাণ কিসে তা কি আমরা জানি!
নদী ঠিক রাখার অন্যতম উপায় হলো নদীর গতিপথ ঠিক রাখা। নদীর গতিপথ ঠিক রাখার জন্য নদীর গভিরতা ঠিক থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে নদী দখল করে বাসস্থান, কলকারখানা তৈরি, নদী থেকে বালু উত্তোলন করে দালান-কোঠা তৈরি, নদী ভরাট যেন নিত্যদিনের হয়ে গিয়েছে। বালু উত্তোলনের প্রধান মাধ্যম নদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নদী ছাড়াও যে বালুর ব্যবস্থা করা সম্ভব তা আমরা ভুলে গিয়েছি। বালু শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে কিংবা সমুদ্র থেকে বালু প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বালুর ব্যবস্থা করা যায়। নদীপথে নৌযানে আজকাল অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদাবাজির মতো ঘটনা প্রায় অনেক নদীতে দেখা যায়। যেমন: মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, পদ্মা ও মংলার পশুর সহ বিভিন্ন নদীতে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, বড় বড় জাহাজগুলোতে ডাকাতির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। অন্যান্য দেশে জলদুস্যর মতো ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি অহরহ। ‘দেশের নদী, দশের গতি’ এই মর্মে আমাদের নদীকে বাঁচাতে হবে। নদী শুধু চলাচলের মাধ্যমই নয়, এটা আমাদের জীবনের গতিপথ রেখা। জীবন ও জীবিকার জন্য নদীর বিকল্প নেই। নদী ও নৌযানের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না যেটা কিনা পরবর্তীতে নদীর পানিতে মিশে, নৌযানে চাঁদাবাজি বন্দের জন্য নৌবাহিনীর টহল কার্যরত করতে হবে। নির্ভুল নৌযান ব্যবহার করতে হবে। নৌযান কিছুদিন পর পর মেরামত করতে হবে। নদী হোক দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে
প্যানেল