ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

এবার চীন-তুরস্কের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল ভারত

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১৪ মে ২০২৫

এবার চীন-তুরস্কের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল ভারত

ছবি: সংগৃহীত।

মাত্র চার দিনের সামরিক সংঘাতে ভারতের শক্তিমত্তার মুখোশ যেন খুলে পড়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে নয়াদিল্লি ভেবেছিল দ্রুত বিজয় নিশ্চিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণে ভারতীয় বাহিনী হঠাৎ করেই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের হাতে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক চীনা ও তুর্কি ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যত অকার্যকর করে দিয়েছে। যার ফলে একের পর এক সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে পাকিস্তান। এই অভাবনীয় পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে চীন ও তুরস্কের প্রতি—যাদের সামরিক প্রযুক্তিই পাকিস্তানকে এই ক্ষমতা দিয়েছে।

পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় এবার ভারত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে চীন ও তুরস্কের বিরুদ্ধে। নয়াদিল্লি কর্তৃপক্ষ দেশ দুটির বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে। ভারত সরকারের বক্তব্য—এই অ্যাকাউন্টগুলো “ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।”

ব্লক করা অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • চীনের গ্লোবাল টাইমস (Global Times)
  • সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি (Xinhua)
  • তুরস্কের টিআরটি ওয়ার্ল্ড (TRT World) ও আরেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান

এর আগে নয়াদিল্লি থেকে বেইজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে গ্লোবাল টাইমসকে সরাসরি সতর্ক করা হয়েছিল ভুয়া তথ্য ছড়ানো নিয়ে।

ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB) জানিয়েছে, চলমান সংঘাত নিয়ে চীনা ও তুর্কি গণমাধ্যম পুরনো ও বিকৃত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করছে। এসব তথ্য যাচাই করে PIB-এর ফ্যাক্ট চেক ইউনিট নিশ্চিত করেছে—এগুলি বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের মাঠের পাশাপাশি এখন তথ্যের ময়দানেও বড় লড়াই চলছে। ভারত যেভাবে মিডিয়া ব্লক করছে, তা কূটনৈতিক বার্তা বহন করে।

চলমান সংকটের মধ্যেই আবার উত্তপ্ত হয়েছে অরুণাচল ইস্যু। চীন একাধিকবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করেছে। সম্প্রতি অঞ্চলটির নতুন নতুন “চীনা নাম” ঘোষণা করে দাবি আরও জোরালো করেছে বেইজিং।

এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “চীন বারবার অরুণাচল প্রদেশের স্থানের নাম পরিবর্তন করে একপেশে দাবির চেষ্টা করছে। আমরা এ ধরনের যেকোনো প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অখণ্ড অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।”

চীন ২০২৪ সালেই এই রাজ্যের অন্তত ৩০টি স্থানের নতুন নাম প্রকাশ করেছিল, যা নিয়েও প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত।

বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সীমিত লড়াইয়ে ভারতের প্রযুক্তিগত দুর্বলতা চোখে পড়েছে। বিশেষ করে চীন-তুরস্কের ড্রোন ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সামনে ভারতের বহুমূল্য ফরাসি ও রুশ অস্ত্র কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

সেইসঙ্গে ভারতের এই ধরনের মিডিয়া ব্লকিং পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশটির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম স্বাধীনতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলছে।

তবে সামরিক কৌশল, তথ্যনিরাপত্তা ও ভূরাজনীতির সমীকরণে ভারত কীভাবে নতুন অবস্থান নেবে—সেটিই এখন দেখার বিষয়।

নুসরাত

×