
.
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে যুদ্ধ বন্ধ করবেন না বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হবে না। তবে তিনি একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বিবেচনা করতে পারেন। এদিকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উত্তর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক হামলায় মধ্যরাতের পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ জন। আর দক্ষিণ গাজায় হাসপাতালে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩০ জন। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
বুধবার আহত সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে নির্মূল করা এবং আমাদের সব জিম্মিকে মুক্ত করা এই দুই কাজ একসঙ্গে চলবে। হামাস যদি বলে আমরা আরও ১০ জন মুক্তি দিতে চাই, তাও আমরা যুদ্ধ বন্ধ করব না। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের বরাতে জানা গেছে, নেতানিয়াহু তার জোট সঙ্গীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, যদি হামাস অস্ত্র ত্যাগ না করে তবে ইসরাইল কেবল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতেই সম্মত হবে। তাও কিছু বন্দি মুক্তির বিনিময়ে। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে অভিযান চালাব হামাসকে পরাজিত করতে।
আমাদের সেনারা ইতোমধ্যে সেখানে মোতায়েন আছে। এর আগে নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি তার আলোচক দলকে কাতারে পাঠিয়েছেন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরের সময় ওই প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দোহায় অবস্থান করবে বলে জানা গেছে। এদিকে সোমবার ইসরাইলি-আমেরিকান বন্দি ইদান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেয় হামাস। গোষ্ঠীটি জানায়, ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে এই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যা চলমান যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার অংশ। ইসরাইলের তথ্যমতে, ৫৮ জন ইসরাইলি বন্দি এখনো গাজায় আটক রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২১ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরাইলি কারাগারে বর্তমানে ৯ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। যাদের অনেকেই নির্যাতন, অনাহার এবং চিকিৎসা অবহেলার শিকার এবং এসব কারণে একাধিক মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৯০৮ জনে পৌঁছেছে বলে বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন। দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল।
তারপর প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও প্রায় ৭ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। ইসরাইলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরাইল।