
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর সুমিষ্ট আমের জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে)। জেলা প্রশাসনের ম্যাঙ্গোপঞ্জি অনুযায়ী আজ চলতি মৌসুমের গুটিজাতের পাকা আম বাজারে মিলবে।
মূলত আজ থেকেই রাজশাহীর আমের কারবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এবছর রাজশাহীতে এক হাজার ছয়শত পঁচানব্বই কোটি পঁচাশি লাখ টাকার বেশি আমের বাণিজ্য আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীর আমচাষি ও বাগানীরা গাছে গাছে গুটি জাতের আম পাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও হাকডাক শুরু করবেন আজ থেকে।
রাজশাহীর আমচাষিরা বলছেন, কদিন ধরেই গাছে গাছে গুটি জাতের আমে পাক ধরেছে। তবে প্রশাসনের নির্দেশনার কারণে আম পাড়া সম্ভব হয়নি। যদিও অনেকে এরই মধ্যে বাজারে তুলেছেন গুটিজাতের পাকা আম।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ঘোষিত ম্যাঙ্গোপঞ্জি অনুযায়ী, আজ বাজারে পাওয়া যাবে গুটি জাতের আম। আজ থেকেই বাজারজাত করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এ মাসেই বিভিন্ন জাতের আম বাজারে মিলবে একের পর এক ধারাবাহিকভাবে। সে অনুযায়ী জনপ্রিয় গোপালভোগ আম মিলবে আগামী ২২ মে। এর ঠিক দুদিন পর বাজার রাঙাতে আসবে রানিপসন্দ ও লক্ষ্মণভোগ। আর মসের শেষ দিনে অর্থাৎ ৩০ মে থেকে বাজারে সুবাস ছড়াবে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি।
এছাড়া পর্যায়ক্রমে ১০ জুন থেকে ব্যানানা ম্যাংগো ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া, কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই পাকা সাপেক্ষ পাড়া যাবে। সবমিলিয়ে আজ থেকে আগামী তিন মাসজুড়ে রাজশাহীতে কারবার চলবে আমের।
খুচরা থেকে পাইকারী সব ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে তাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। দেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর পাশাপাশি অনলাইনে আম ডেলিভারির কাজেও নামছেন উদ্যোক্তরা। পাইকাররাও রাজশাহীতে আসতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন এবার তারা আমের ভালো বাণিজ্য করবেন। আর আমবাগানীরা ভালো ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার আমের বাম্পার ফলন হবে রাজশাহীতে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ম্যাঙ্গোপঞ্জি অনুযায়ী এবার বাজারে পরিপক্ব আম মিলবে।
রাজশাহী জেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয় বাঘা ও চারঘাট উপজেলায়। জেলায় মোট উৎপাদিত আমের অর্ধেক আম চাষ হয় এই দুই উপজেলায়। বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, এবার তার নিজের ও ইজারা নেওয়া ৬০ বিঘা আমবাগান রয়েছে। তিনি বলেন, তার বাগানের গুটি আম ইতোমধ্যে পেকে গেছে। এখনই বাজারে নেওয়ার উপযোগী হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পাকা আম পাড়া হবে।’ এদিন তিনিই প্রথম বাাজরে আম তুলবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বুধবার (১৪ মে) রাজশাহীর বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখা গেছে, পাকা আম ঝুলছে গাছে গাছে। নিচে পাহারা বসিয়েছেন বাগান মালিকরা। তারা বলছেন, গুটি জাতের সব আম পেকে খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেছে। সামান্য বাতাসে পাকা আম গাছ থেকে খসে পড়তেও দেখা গেছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদল হক রিংকু বলেন, রাজশাহীর আমের একটি সুখ্যাতি রয়েছে। আমের মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি থাকে চাঙ্গা। আম কেন্দ্রিক বাণিজ্যে সচল থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এবারো আমের ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থা এবার ঠিকঠাক রয়েছে। একারণে এবার রাজশাহীর আমকেন্দ্রিক বাণিজ্য ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, মানুষ যাতে জীবাণুমুক্ত, ফ্রেশ আম পায়, সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে এবার। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাজশাহীতে এবার এক হাজার ছয়শত পঁচানব্বই কোটি পঁচাশি লাখ টাকার বেশি আমের কেনাবেচা হবে।
মামুন-অর-রশিদ/রাকিব