
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন একটু কাজ করলেই ক্লান্ত লাগছে? শরীরে কোনও শক্তি নেই বলেই মনে হচ্ছে? মাথা ঘোরানো, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, কিংবা অতিরিক্ত চুল পড়া—এসব উপসর্গ যদি একসঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে এটি সাধারণ ক্লান্তি নয়। হতে পারে শরীরে লুকিয়ে আছে আয়রনের ঘাটতির কারণে সৃষ্ট রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই রোগটি খুবই সাধারণ হলেও অনেকেই তা বুঝতে পারেন না।
দুর্বল লাগার প্রধান কারণ:
১. আয়রনের ঘাটতি ও রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া):
শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি কমে যায়। ফলে শরীরে অক্সিজেন পরিবহন ব্যাহত হয় এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
২. অপর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ:
নিয়মিত খাবারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন-বি১২, ফলিক অ্যাসিড না থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩. ঘুমের অভাব বা মানসিক চাপ:
কম ঘুম ও দীর্ঘদিনের স্ট্রেস শরীর ও মন দুটোই নিঃশেষ করে ফেলে।
৪. থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা:
হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতার কারণে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
৫. ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ:
কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদি অসুখের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে দুর্বলতা ও ক্লান্তি।
লক্ষণ যেগুলো উপেক্ষা করবেন না:
- প্রতিদিন ঘুমিয়েও ক্লান্তিভাব না কাটানো
- অল্প হাঁটলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম
- মুখ, চোখ ও ত্বকে ফ্যাকাসে ভাব
- চুল বেশি পড়ে যাওয়া
- মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
সমাধান ও করণীয়:
১. রক্ত পরীক্ষা করান:
নিয়মিত দুর্বলতা থাকলে হিমোগ্লোবিন, আয়রন ও থাইরয়েড পরীক্ষা করিয়ে নিন।
আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান:
গরুর কলিজা, গরু ও মুরগির মাংস, ডিম, পালংশাক, লাল শাক, মসুর ডাল, ছোলা, বাদাম, কিসমিস ও টমেটো খাদ্যতালিকায় রাখুন।
৩. ভিটামিন-বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার:
দুধ, দই, মাছ, কলা, পেঁপে, পালং শাক এসব খেতে হবে।
৪. প্রচুর পানি পান করুন ও পর্যাপ্ত ঘুমান:
প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
৫. মানসিক চাপ কমান:
মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম ও সময়মতো বিশ্রাম মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
শুধু ঘরোয়া সমাধানে না গিয়ে পেশাদার পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
দুর্বলতা যদি নিয়মিত অনুভব করেন, তাহলে সেটিকে অবহেলা করবেন না। এটি হতে পারে বড় কোনও রোগের পূর্বাভাস। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনি ফিরে পেতে পারেন সুস্থ, শক্তিশালী ও কর্মক্ষম এক জীবন।
এসএফ