
ছবি: সংগৃহীত
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল অপসারণ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। তবে কিডনি দুর্বল হলে শরীরে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে, এমনকি মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা জেনেটিক কারণে কিডনি বিকল হতে পারে, তবে দীর্ঘ সময় ব্যবহৃত কিছু সাধারণ ওষুধও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। নিচে এমন সাতটি সাধারণ ওষুধ সম্পর্কে তুলে ধরা হলো, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
১. নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs)।
মাথাব্যথা, পেশীর ব্যথা, জ্বর বা বাতের ব্যথায় ব্যবহৃত এসব ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘ সময় বা উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ করলে কিডনিতে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এমনকি কিডনি ফেলিওর পর্যন্ত হতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা, হার্ট ফেইলিউর বা লিভারের অসুস্থতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব ওষুধ স্বল্প সময়ের জন্য এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কম মাত্রায় নেওয়াই ভালো।
২. অস্টিওপোরোসিসের ওষুধ (বিসফসফোনেটস)।
অস্টিওপোরোসিস ও নির্দিষ্ট ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত জোলেড্রোনিক অ্যাসিড (Reclast) সহ কিছু ওষুধ বিরল হলেও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা হয়।
৩. সোডিয়াম ফসফেটযুক্ত ল্যাক্সেটিভস।
কোনো কোনো জোলাপ, বিশেষ করে কোলনোস্কপির আগে দেওয়া সোডিয়াম ফসফেটযুক্ত ল্যাক্সেটিভ, কিডনিতে ফসফেট স্ফটিক জমা করে একিউট কিডনি ইনজুরি সৃষ্টি করতে পারে। যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের জোলাপ ব্যবহারে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ (ACE ইনহিবিটর ও ARB)।
লিসিনোপ্রিল, এনালাপ্রিল ও রামিপ্রিল জাতীয় ওষুধ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট রক্ষা করতে সহায়ক হলেও, ডিহাইড্রেশন বা অন্য ক্ষতিকর ওষুধের সঙ্গে গ্রহণ করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব ওষুধ সেবনের সময় চিকিৎসকরা কিডনির কার্যক্ষমতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডোজ সমন্বয় করেন।
৫. অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ।
আমিনোগ্লাইকোসাইড, ভ্যানকোমাইসিন, অ্যাসাইক্লোভির ও এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত টেনোফোভির জাতীয় ওষুধ কিডনিতে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করতে পারে। কেউ কেউ ইউরিনে স্ফটিক জমা করে, আবার কেউ কিডনি কোষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডিহাইড্রেশন বা কিডনির পূর্বাবস্থায় ক্ষতির ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ডোজ কমিয়ে বা বিকল্প নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার করেন।
৬. প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI)।
অম্লতা ও এসিড রিফ্লাক্সের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ওমিপ্রাজল (Prilosec), ইসোমিপ্রাজল (Nexium) জাতীয় ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ ও কিডনি ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যবহার করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭. ডায়ুরেটিক (জলচাপ কমানোর ওষুধ)।
উচ্চ রক্তচাপ ও শরীরের ফোলাভাব কমাতে ব্যবহৃত ডায়ুরেটিক ওষুধ অতিরিক্ত পানি ও লবণ অপসারণ করে। তবে সঠিকভাবে না নিলে এটি ডিহাইড্রেশন ঘটিয়ে কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়। এসব ওষুধ গ্রহণের সময় পর্যাপ্ত পানি পান ও কিডনির কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ জরুরি।
উল্লেখিত ওষুধগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি করে। আপনাকে যদি চিকিৎসক এসব ওষুধ দিয়ে থাকেন, তবে নিজে থেকে হঠাৎ বন্ধ করবেন না। যেকোনো পরিবর্তনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: https://shorturl.at/kab4A
মিরাজ খান