
শরীর থেকে পচা মাছের মতো গন্ধ আসা শুনতে অস্বাভাবিক মনে হলেও, বিজ্ঞানের ভাষায় এটি একেবারেই বাস্তব একটি রোগের উপসর্গ। অপরিচ্ছন্নতা নয়, জিনগত ত্রুটির কারণেই দেখা দিতে পারে এই অদ্ভুত গন্ধের সমস্যা। রোগটির নাম ফিশ অডর সিনড্রোম, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা পরিচিত ট্রাইমিথাইল অ্যামিনিউরিয়া নামে।
মানুষ প্রতিনিয়তই নানা রকম শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু এমনও একটি রোগ রয়েছে যার ফলে মানুষের নিঃশ্বাস, ঘাম, থুতু বা প্রস্রাব থেকে বের হয় পচা মাছের মতো তীব্র গন্ধ। এই গন্ধ এতটাই উৎকট হয় যে, একসঙ্গে বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে ভুক্তভোগীর জন্য।
লাইফ সায়েন্সভিত্তিক এক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি মূলত জিনঘটিত একটি রোগ। আমাদের দেহে বিপাকক্রিয়ার এক পর্যায়ে ট্রাইমিথাইল অ্যামিন বা টিএমএ নামের একটি যৌগ তৈরি হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই খুবই দুর্গন্ধযুক্ত।
সাধারণত মানুষের লিভার এটি ভেঙে নির্গন্ধ অন্য যৌবে রূপান্তরিত করে। কিন্তু, বিশেষ এক ধরনের জিনের ত্রুটির কারণে কিছু মানুষের শরীরে এই ভাঙন ঘটানোর প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি হয় না। ফলে শরীরে জমে থাকা টিএমএ থেকেই সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ।
এই রোগে আক্রান্তদের শারীরিকভাবে গুরুতর কোনো ক্ষতি না হলেও, সামাজিকভাবে তারা প্রচণ্ড হীনমন্যতা, অবসাদ ও মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ নারীদের মধ্যেই তুলনামূলক বেশি দেখা দেয়।
এই রোগের এখনো নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কিছু কিছু খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উপসর্গ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সামুদ্রিক মাছ, ডিম, কলিজা, চিনাবাদাম, ব্রকলি, মটরশুঁটি ও গরুর দুধের মতো খাদ্যদ্রব্য ট্রাইমিথাইল অ্যামিন উৎপাদন বাড়ায়। তাই এসব খাদ্য এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
এমন রোগের বিষয়ে সচেতনতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কারণ রোগী অপরাধী নয়, তার শরীরের ভেতরের এক নিষ্করুণ জৈবপ্রক্রিয়ার বলি সে।
সূত্র:https://tinyurl.com/5ferx58w
আফরোজা