চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায় পৃথক দুটি ঘটনায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৬টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘাস খাওয়ার পরেই গরুগুলো মারা যায় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ফলে গ্রামাঞ্চলের পশু পালনকারীরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। শিবগঞ্জের ঘটনাটি তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হলেও ভোলাহাটে তা করা হয়নি। তবে খামারিদের মাঠের যত্রতত্র স্থানে গরুকে ঘাস না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার দিবাগত রাতে জেলার ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরে মাহিদুর ইসলাম নামে এক মাছ বিক্রেতার তিনটি গরু মারা যায়। এর মধ্যে দুটি গরু ছিল কোরবানিযোগ্য। আসন্ন কোরবানি ঈদে সেগুলো বিক্রির জন্য লালনপালন করেছিলেন তিনি। ঘাস খেয়ে মারা যাওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য সাড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এর আগে ৪ মে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়ায় কচি ঘাস খেয়ে একসঙ্গে তিনটি গাভির মৃত্যু হয়। সবগুলো গাভি গর্ভবতী ছিল। গাভিগুলো হারিয়ে খামারি সাদিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী কিমারা বেগম এখন দিশেহারা।
এ দুটি ঘটনায় গ্রামাঞ্চলের পশুপালনকারীরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শিবগঞ্জে ঘাস খেয়ে গর্ভবতী গাভিগুলো মারা যাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্তে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভোলাহাটের ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না উপজেলা প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা। এ প্রতিবেদক সংবাদের জন্য বক্তব্য নিতে গেলে তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আশ্বাস দেন তারা। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
ভোলাহাটের ক্ষতিগ্রস্ত খামারি মাহিদুর ইসলাম বলেন, রবিবার দুপুরের দিকে কানসাট বাজার থেকে ঘাস কিনে এনেছিলাম। বিকেলের দিকে ঘাসগুলো কেটে গরু তিনটিকে খাওয়াই। সন্ধ্যার পর দেখি গোয়ালঘরে ৩টি গরুই মরে পড়ে আছে। এরমধ্যে দুটি কোরবানিযোগ্য গরু ছিল। ভেবেছিলাম কয়েক দিন পরেই হাটে তুলবো। তার আগেই গরুগুলো মারা গেল। আমি আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর আমার গ্রামের অনেকেই গরুকে ঘাস খাওয়ানো নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। তারা গরুকে এখন ঘাস খাওয়াতেই ভয় পাচ্ছেন।
শিবগঞ্জের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কিমারা বেগম বলেন, প্রতিদিনের মতো সকাল বেলায় গাভিগুলোকে কচি ঘাস খেতে দিয়েছিলাম। সুস্থ-সবল গাভিগুলো ঘাস খেয়ে বেলা ১১টার দিকে একসঙ্গে মারা যায়। স্বামী অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় গাভিগুলো আমিই দেখভাল করতাম। গাভি তিনটি ছিল গর্ভবতী। কয়েক দিনের মধ্যেই দুটি গাভির বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। গাভিগুলো হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। কচি ঘাস খেয়ে আকস্মিক কিমারা বেগমের তিনটি গাভির মৃত্যুর খবর পেয়েই শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহাদৎ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, "কচি ঘাসে প্রচুর নাইট্রেট জমে থাকে। অধিক পরিমাণে সেই ঘাস খেলে নাইট্রেট পয়জনিং হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম পয়জনিংয়ের কারণে গরুগুলো মারা যেতে পারে। তারপরেও বিষয়টি তদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা উদ্বেগের মতো কোন কিছুই পাইনি।"
ভোলাহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. ওয়াসিম আকরাম বলেন, "মাহিদুর ইসলামের ৩টি গরু মারা যাওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছে তথ্য থাকলে দেন। লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
সচেতনভাবে পশুপালন করতে হবে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, পশুপালনের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। মাঠের যত্রতত্র স্থানের ঘাস গরুকে খাওয়ানো যাবে না। মাঠের লকলকে ঘাস পরিমাণের থেকে বেশি খেয়ে নিলে নাইট্রেট পয়জনিং হয়ে গরু মারা যেতে পারে। এছাড়া আবাদ করা ঘাস খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ সেগুলো বেশি পরিমাণে ইউরিয়া দেয়া থাকে। এতে করেও গরু মারা যেতে পারে। তবে কম ইউরিয়া দিয়ে আবাদ করা ঘাস গরুকে খাওয়ালে কোন সমস্যা হবে না।
নোভা