
ছবি: সংগৃহীত
একটি বিরল জেনেটিক মিউটেশনই হতে পারে সেই ‘ভাগ্যবান’ মানুষের রহস্য, যারা রাতে মাত্র চার থেকে ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়েও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেন—সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এই মিউটেশন মানুষের ঘুম-জাগরণ চক্রকে প্রভাবিত করে, যার ফলে তাদের ঘুমের পরিমাণ কম হলেও গভীর ঘুমের পরিমাণ বেশি হতে পারে।
চিকিৎসকরা সাধারণত প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন। কারণ, ঘুমের অভাব আলঝেইমার, হৃদরোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে জড়িত। তবে, PNAS জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি বলছে—সব স্বল্প ঘুমানো মানুষই যে এসব রোগে আক্রান্ত হন, তা নয়।
গবেষণার সহ-লেখক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী ও জেনেটিসিস্ট ইয়িং-হুই ফু লাইভসায়েন্স-কে বলেন, "যখন আমরা ঘুমোতে যাই, আমাদের দেহ তখনও কাজ করে যায়। স্বল্প ঘুমের স্বাভাবিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের দেহ ঘুমের সময় এমন কিছু কাজ আরও দক্ষভাবে সম্পন্ন করতে পারে, যেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।"
গবেষণায় SIK3-N783Y নামের একটি মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে এক 'সুপার স্লিপার' মানুষের মধ্যে। এরপর গবেষকরা জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত ইঁদুরের শরীরে এই মিউটেশনটি প্রয়োগ করেন এবং দেখতে পান, ওই ইঁদুরও স্বাভাবিকের তুলনায় কম ঘুমায়।
গবেষণায় দেখা যায়, মিউটেশনযুক্ত ইঁদুর সাধারণদের তুলনায় প্রায় ৩১ মিনিট কম ঘুমায়। আবার ঘুমের অভাব তৈরি করে (নরমভাবে ইঁদুরকে না ঘুমোতে দিয়ে) পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, মিউটেশনযুক্ত ইঁদুর ৫৪ মিনিট কম ঘুমায়।
গবেষকরা বলেন, "এই মিউটেশন ইঁদুরের ঘুমের সময় হ্রাস করে এবং ইইজি ডেল্টা পাওয়ারে (মস্তিষ্কের গভীর ঘুমের তরঙ্গ) বৃদ্ধি ঘটায়।"
তারা আরও জানান, এই মিউটেশন প্রোটিনের গঠনগত পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে এটি অন্যান্য প্রোটিনে গুরুত্বপূর্ণ ফসফেট অণু স্থানান্তর করার ক্ষমতা হারায়।
গবেষণাটির ফলে ভবিষ্যতে ঘুমের নানা রোগের জন্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, "আরও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে—ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণকারী অতিরিক্ত কিছু কাইনেজও (এক ধরনের এনজাইম) থাকতে পারে, যা এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অংশ।"
সূত্র: https://www.ndtv.com/science/how-some-people-manage-on-just-4-hours-of-sleep-scientists-answer-8388327
এএইচএ