
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার ভাঙ্গুড়া খা পাড়া ফেরিঘাটে গুমানি নদীর উপর নদী ঘাটে নির্মিত হয়নি একটি সেতু। ফলে বছরের পর বছর ধরে গুমানি নদীর ওপর খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ভাঙ্গুরা উপজেলার সদর ইউনিয়ন সদরে অবস্থিত এই গ্রামটি ঐতিহাসিক শিক্ষা রাজনৈতিক সহ উপজেলার শীর্ষে অবস্থান করে। বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এই নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য বারবার মাপামাপি করে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত ব্রিজের নামে এলাকাবাসী আশার উপরই পড়ে আছে।
জানা গেছে, সারা বছর এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে হয় খেয়া নৌকায়। খেয়া নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় শিশু, বৃদ্ধ, রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের। এখানকার মানুষদের জন্য নদী পারাপারে কোনো স্থায়ী সেতু না থাকাটা যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গুমানি নদীতে মাঝে মাঝে কচুরি পানা জ্যাম হয়ে যাওয়ায় পাঁচ দিন সাত দিন ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে পারেনা। কৃষকরা মালামাল নিয়ে হাটবাজারে যেতে পারেনা। স্কুল কলেজ বাজারে আসতে হলে অনেক পথ ঘুরে ঘুরে আসতে হয় তাদের। এ কারণে ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সবাই স্কুল বন্ধ দিয়ে বাসায় বসে থাকতে হয় তাদের দ্বারা এত ব্যয়বহুল খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। উপজেলা সদরের সাথে এই গুমানি নদীর উপর ব্রিজের দাবি এলাকাবাসীর যোগাযোগ করতে প্রায় ৮-১০ কিলো ঘুরে উপজেলা সদর বা হাটবাজারে যাতায়াত করতে হয়। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই নদীর উপর একটি ব্রিজ হলে অত্র এলাকার মানুষ অনেক সহজে চলাচল করতে পারে।
বর্ষাকালে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চলাচল করতে হয় এই সমস্ত মানুষদের। মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থী শিশুদের নৌকা ডুবির কবলে পড়তে হয়। অভিভাবকরা ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় দিন কাটায়। সামান্য ভারসাম্য হারালেই নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে বৃষ্টি, কুয়াশা বা অন্ধকারে বিশাল এই নদী পারাপার হওয়াটা অনেক বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়।
নদীর উত্তর পরে খান মরিচ ইউনিয়ন পূর্ব পাশে দিলপাশার ইউনিয়ন সহ সিরাজগঞ্জ জেলার মোহনপুর উল্লাপাড়া লোকজন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন এবং শরৎ নগর একটি বিশাল গরুহাট এই গরু হাটে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু বেচা কেনা জন্য আমদানি রপ্তানি করে থাকেন। এই গুমানী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ হলে শরৎনগর হার্টের সঙ্গে সারা বাংলাদেশে গরু হাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। অত্র এলাকার রাজস্ব আয় ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি টাকা এই হাটের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে।
মোহনপুর উল্লাপাড়া ইউনিয়নের লোকজন এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে। ইউনিয়ন দিলপাশার বাউন জান মাগুরা হাট উধুনিয়া লক্ষী কোল পাটুল আদাবাড়িয়া চক লক্ষীপুর ঘোলা রিয়া আকবহর পাচবহর খান মরিচ ইউনিয়নের উত্তরে কটোবাড়িয়া দুধ বাড়িয়া পরমান্দপুর জয়রামপুর মাদারবাড়ীয়া কয়রা চন্ডিপুর সুলতানপুর সাতবাড়িয়া দুধ বাড়িয়া মহিষবাথান সহ অত্র এলাকার গ্রামবাসী এই রাস্তা দিয়ে উপজেলা সদর হাটবাজার উপজেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন।
ভাঙ্গুড়া হাজী জামাল উদ্দিন অনার্স কলেজ, ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ, বিবি স্কুল এন্ড কলেজ শরৎনগর, সিনিয়র মাদ্রাসা শরৎনগর, মহিলা মাদ্রাসা, জরিনা রহিম উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা পরিষদ, থানা পরিষদ, পৌরসভা সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ব্যাংক এবং ধান, চাল, গম, পাট সহ বিভিন্ন ভুষাল মালের মহজনরা এখানে রয়েছে। এই সব স্থানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন হাজারো মানুষ। বর্ষাকালে নৌকা না চললে অনেক সময় রোগীকে নদীর পাশেই আটকে থাকতে হয়। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বিপজ্জনক নৌকা পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম কিংবা জরুরি সেবা গুলোও ব্যাহত হয় এই সেতুর অভাবে।
ভাঙ্গুড়া খা পারা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর জব্বার সালাম মহিউদ্দিন কামাল হোসেন নিতাই রায় দৈনিক জনকন্ঠর সংবাদদাতাকে জানান, বর্ষায় নদী ভরা থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পার হতে হয়। খেয়া নৌকার জন্য কখনো কখনো ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আর শীত কালে নৌকা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন সেটা এতটাই দুর্বল থাকে যে ভয়ে ভয়ে পার হতে হয়। অসুস্থ রোগী, গর্ভবতী নারী কিংবা শিশুদের নিয়ে পার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভাঙ্গুড়া খা পাড়া গ্রামের ইউনুস আলী বলেন, গুমানি নদীর ওপর সেতু না থাকায় প্রতিদিন কষ্ট করে পারাপার হতে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ, কলেজ, ভূমি অফিস কিংবা হাটবাজারে যেতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। এমনকি অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাস মিস করে। আমাদের দাবি, অবিলম্বে এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হোক।
এলাকাবাসীর দাবি, একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে এখনও যদি পারাপারের জন্য নৌকার উপর নির্ভর করতে হয়। তাহলে তা শুধু হতাশা জনক নয়, চরম অবহেলার বহি:প্রকাশ। এলাকাবাসী দ্রুত গুমানি নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করে স্বাভাবিক যাতায়াত ও উন্নয়নের পথ সুগম করার জোর দাবি জানান।
বিভিন্ন সংস্থার লোক বারবার ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাপামাপি এবং মাটি পরীক্ষার কাজও একাধিকবার করেছে। ভাঙ্গুরা দৈনিক জনকণ্ঠের সংবাদদাতা কে জানান আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। এছাড়া এই গুমানি নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বাস প্রদান করে। বিভিন্ন সংস্থার লোক মাপামাপির কাজের সময় তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলার সংলগ্ন হওয়ায় জন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দ্রুত সেতু নির্মিত হবে।
নোভা