
ছবি: সংগৃহীত
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ২৪ (২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন) এবং ৭১ (মুক্তিযুদ্ধ) একে অপরের মুখোমুখি নয়, বরং একটির পরিপূরক অন্যটি। ইতিহাসকে পূজা দেওয়ার কিছু নেই, বরং সেটিকে স্বীকৃতি দিয়ে বর্তমানের জীবনযাপনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক রেজাউল করিম রনি ।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
রনি বলেন, ৭১-এর সমতুল্য আর কোনো ঘটনাই বাঙালির জীবনে আসবে না। কারণ, তখন আমরা একটি ভূখণ্ড ও জাতিসত্তার স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪-এর আন্দোলন ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবি— যে দাবি আবারও আমাদের রাজনৈতিক অধিকার সচেতনতার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার দুটি স্তর থাকে— একটি ভৌগোলিক, আরেকটি রাজনৈতিক। ভূখণ্ড থাকলেই স্বাধীনতা পূর্ণ হয় না, যদি রাজনৈতিক অধিকার না থাকে। যারা আজকে এই রাষ্ট্র চালাচ্ছে, তারা আইয়ুব খানের চেয়েও খারাপভাবে শাসন করছে।”
রনি স্পষ্ট করেন, এই প্রজন্ম অনেকাংশে ভোগবাদী ও নৈতিকতাবর্জিত বলে মনে করা হলেও, তারা ২০২৪ সালের আন্দোলনে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। একজন ছাত্র, যার বাবা ঘুষ নিয়ে তাকে আইফোন দিয়েছে— সেই ছেলেও গিয়েছিল আন্দোলনে। কারণ, সে বুঝেছে অন্যায় কোথায়। এটা এক ধরনের নৈতিক অভ্যুত্থান।
তিনি আরও বলেন, ৭১ সালের আন্দোলন যেমন এক ধরনের জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ ছিল, ২৪-এর আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ। এই আন্দোলন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসেরই অংশ। ইতিহাসে কোনো ঘটনার সঙ্গে আরেকটা মুখোমুখি হয় না, বরং ধারাবাহিকতার অংশ হয়।
রনি জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে বলেন, ৭১ সালে জামায়াত ছিল ইতিহাসের ভুল পাশে। তারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল, কারণ তারা সবসময় স্টেট বা ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকে। আজকের সরকারও অনেক সময় এমন আচরণ করে, যেন জামায়াতের আদর্শেই চলছে।
তিনি বলেন, যারা আজ ‘গোলাম আজমের বাংলায় শেখ মুজিবের ঠাঁই নেই’ বলে স্লোগান দেয়, তারা বিকেলে আবার বলে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নেই।’ এটা দ্বিচারিতা। বঙ্গবন্ধুর বাংলাও আমাদের, গোলাম আজমও এই দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন আদালতের মাধ্যমে। কিন্তু ইতিহাস রায় দিয়ে রেখেছে, কে ছিল সঠিক আর কে ভুল।
আলোচনার শেষাংশে রনি বলেন, যদি কেউ ৭১-কে অস্বীকার করে, তবে তাকে ৭১-এর চেয়ে বড় জাতীয় ঘটনা সৃষ্টি করতে হবে অথবা ৭১-এ তার অবস্থান ভুল ছিল তা স্বীকার করে সামনে এগোতে হবে। অন্যথায় সে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না।
এসএফ