
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী পাকিস্তানের প্রতি এমন সহায়তায় তীব্র আপত্তি জানালেও ভারত এই সিদ্ধান্ত রুখতে ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার মধ্যে এই বেইলআউট নিয়ে দিল্লি কড়া ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ—একদিকে পাকিস্তান বারবার অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, অন্যদিকে এই অর্থ সন্ত্রাসে ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। ইসলামাবাদ অবশ্য এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
আইএমএফ-এর সিদ্ধান্ত থামাতে না পারার পেছনে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা বড় কারণ। সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ডে ২৫ সদস্য থাকলেও ভারতের ভোটাধিকার মাত্র ২.৬ শতাংশ। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাধিকার ১৬.৪৯ শতাংশ। আইএমএফ-এর নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই—শুধু পক্ষে ভোট দেওয়া বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার সুযোগ থাকে। ফলে দিল্লির আপত্তি কার্যত প্রতীকী ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইলআউট থামানোর চেষ্টা যতটা না বাস্তবিক, তার চেয়ে বেশি ছিল কূটনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে।
ভারতের আপত্তিতে বলা হয়, আইএমএফ এই সহায়তার মাধ্যমে "সন্ত্রাসে মদদদাতা রাষ্ট্রকে পুরস্কৃত করছে", যা আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের প্রতি অবমাননার শামিল। যদিও আইএমএফ ভারতীয় আপত্তির বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষকেরাও স্বীকার করছেন, ভারতের প্রথম আপত্তি—পাকিস্তানের সংস্কারহীনতা—একেবারে অমূলক নয়। সাবেক পাক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেন, এক রোগী যদি ২৪-২৫ বার আইসিইউতে যায়, তবে তার মধ্যে গঠনগত সমস্যা আছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই।
আইএমএফ বোর্ডে ভারতের সীমিত প্রভাব নিয়ে দিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক মিহির শর্মা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আইএমএফ যেভাবে নিয়ম পরিবর্তন করে ঋণ দিয়েছে, তাতে পাকিস্তানের ঋণ থামানোর কোনো বাস্তব পথ খোলা ছিল না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানকে ঠেকাতে হলে সঠিক মঞ্চ ছিল ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)। কারণ FATF তালিকায় থাকা দেশগুলোকে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ থেকে অর্থায়ন পেতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তান ২০২২ সালেই FATF-এর গ্রে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
তবে ভারত যদি আইএমএফ-এর কাঠামোগত সংস্কার চায়, তবে তা ভবিষ্যতে চীনের মতো প্রভাবশালী দেশের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা তুলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
দিল্লি তাই দ্বিপাক্ষিক বিরোধ বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক ফোরামে না তোলার বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলেই মত দিচ্ছেন কূটনীতিক ও অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এই ঘটনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং উন্নয়নশীল দেশের সীমিত প্রভাব নিয়ে বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।
এসএফ