ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বিআরটিএ অফিসে দুদক

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ৯ মে ২০২৫

বিআরটিএ অফিসে দুদক

সরকারের প্রতিটি দপ্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শিকড় থেকে শিখড়ে। এই মাত্র কিছু দিন আগে, ১৬ এপ্রিল দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দেশের ৩৫ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একযোগে অভিযান চালায় দুদক। ২৯ এপ্রিল সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রধান কার্যালয়সহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সারাদেশের ৩৬টি আঞ্চলিক অফিসে অভিযান চালানো হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই সারা দেশে ৩৫টি  বিআরটিএ’র স্থানীয় কার্যালয়ে অভিযান।
১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন সংশোধন করে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। বিআরটিএ জানুয়ারি-১৯৮৮ সাল থেকে কাজ শুরু করে। বিআরটিএ-এর আওতাধীন ৫৭টি জেলা এবং ৫টি মেট্রোসহ মোট  ৬২টি সার্কেল রয়েছে। রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি মোটরযান আইন কার্যকর করে, রুট পারমিট প্রদান, বাস ও ট্রাকের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক পরিবহন, নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ ছাড়া, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং ড্রাইভিং প্রশিক্ষকের লাইসেন্স প্রদান মোটরগাড়ি চালানোর জন্য স্কুল নিবন্ধন করা। নিরাপদ ড্রাইভিং এবং ট্রাফিক নিয়মকানুন সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন। নিরাপদ সড়ক পরিবহন এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ। এটি একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দালালচক্রের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঘুষ লেনদেনসহ নানা অভিযোগে দুদক অভিযান চালায়। দুদক দেশের বেশ কয়েকটি অফিসে দালালদের সরব ও উন্মুক্ত উপস্থিতি দেখতে পায় এবং নানা অনিয়ম হাতেনাতে ধরাও পড়ে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ দালালদের সরব উপস্থিতি। অধিকাংশ অফিসে দালাল ছাড়া সহজে কোনো কাজ হয় না। দালালসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রেপ্তার ও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিদান- তবুও কি থেমে থাকবে দুর্নীতি- দুরাচার? অতীত ইতিহাস অন্তত তা বলে না। তবে এ সবের সমাধান কোন পথে- নাগরিক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে খুঁজে বের করতে হবে সরকারকে। স্বাধীনতার পর, সব সরকারের আমলে কম-বেশি দুর্নীতি হয়েছে। তবে সব দুর্নীতি-দুরাচার ছাপিয়ে গেছে, সাড়ে পনেরো বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে।
সময় যত গড়িয়েছে দুর্নীতির ডালপালা ততই মেলে ধরেছে নাগরিকদের জীবনে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এই অনিয়মের মহামারি যেন আমাদের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।  জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানউত্তর দেশের নাগরিকরা নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধে ছিল। কিন্তু সে শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত রাষ্ট্রীয় সেবা অধরাই থাকবে? ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা মলম দেব কোথা’ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন কৌশল প্রণয়নে মনোযোগ দিতে হবে।

প্যানেল

×