ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

মায়ের জন্যে মমতা

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

মায়ের জন্যে মমতা

মা শব্দটির মধ্যে যেমন ভালোবাসা, ত্যাগ আর নিরন্তর স্নেহ লুকিয়ে আছে, তেমনি লুকিয়ে আছে এক নিঃশব্দ সংগ্রামের কাহিনী। মা হওয়ার অর্থই  যেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে অন্যের জন্য উৎসর্গ করা। সমাজে মায়েদের বিড়ম্বনা বহু স্তরীয়। কখনো তা শারীরিক, কখনো মানসিক, আবার কখনো সামাজিক।
একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন, তখনই তার জীবনের ছন্দ বদলে যায়। নিজের চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন, এমনকি বিশ্রামের সময়টুকুও চলে যায় পরের পরিচর্যায়। রাতের পর রাত জেগে সন্তানের পাশে বসে থাকা, নিজের অসুস্থতাকেও পাত্তা না দিয়ে সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করা যেন মায়েদের দৈনন্দিন বাস্তবতা। অথচ এই আত্মত্যাগগুলোর স্বীকৃতি মায়েরা কতটা পান?
কর্মজীবী মায়েদের বিড়ম্বনা আবার ভিন্ন রকম। ঘরের দায়িত্ব আর বাইরের কাজের ভার দুই কাঁধে নিয়ে চলতে হয় তাদের। অফিসে সময়মতো  পৌঁছাতে হয়, আবার বাসায় ফিরে সন্তান-স্বামী-শ্বশুরবাড়ির দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক সময় চাকরি বা পেশাদারিত্ব বিসর্জন দিতে হয় শুধু পরিবারের ভার বহন করতে গিয়ে। এছাড়াও, সমাজে এখনো এমন ধারণা আছে যে একজন ‘ভালো মা’ সব কিছু সহ্য করে, অভিযোগ না করে। এই সংস্কার থেকে বের হতে গিয়ে যারা নিজের সময় বা নিজের পরিচয়কে গুরুত্ব দিতে চান, তাদের অনেক সময় ‘স্বার্থপর’ বলা হয়। অথচ একজন মায়ের নিজের সময়, নিজের ইচ্ছেগুলো উপেক্ষা করার মধ্যেই কি প্রকৃত মমত্ব লুকিয়ে আছে?
গ্রামীণ বা দরিদ্র পরিবারের মায়েদের সংগ্রাম আরও কঠিন। অর্থনৈতিক দুরবস্থায় সন্তানদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে গিয়ে তারা নিজের খাবার ত্যাগ করেন। চিকিৎসার অভাবে ভুগে ভুগে কাজ করেন, শুধু পরিবারটা যেন ঠিকঠাক চলে।তবে সব বিড়ম্বনার মাঝেও মায়েরা থেমে যান না। তাদের হাসিমাখা মুখ আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে তারা প্রতিদিন নতুন করে জীবন গড়েন। কিন্তু আমাদের উচিত, এই নিঃশব্দ সংগ্রামীদের প্রতি আরও সংবেদনশীল হওয়া, তাদের শ্রম ও অনুভূতির মর্যাদা দেওয়া। মায়েদের বিড়ম্বনা শুধুই সহ্য করার বিষয় নয়, বরং সমাজকে এমনভাবে গড়ে তোলাই জরুরি যেখানে মা হওয়া মানে শুধু ত্যাগ নয়, সম্মান ও সহমর্মিতারও প্রতীক হয়ে উঠবে।

 ফেনী, সোনাগাজী থেকে

প্যানেল

×