ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূলধারায় ফিরে আসুক

মাহমুদা টুম্পা

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূলধারায় ফিরে আসুক

মানুষের জন্ম দৈবের অধীন আমাদের অনেকেই জন্ম থেকেই দুরারোধ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা বা যুদ্ধ কবলিত হয়ে প্রতিবন্ধী  কারো বা বয়োবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বোধশক্তির দীনতা ধরা পড়ে দৈহিক বা মানসিক দিক দিয়ে যার জীবনে স্বাভাবিক বিকাশের অপূর্ণতা, প্রতিবন্ধকতা বা বাঁধা সেই প্রতিবন্ধী সমাজে মূক, বধির, বিকলাঙ্গ, জড়বুদ্ধি এরা সবাই প্রতিবন্ধী এদের জীবনে পদে পদে সমস্যা এরা পৃথিবীর রং রূপ রসের বিলাশ বৈচিত্র্য অনেক কিছু উপভোগ করতে অক্ষম তারা সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপনে অক্ষম দিকে দিকে যে বিচিত্র কর্মধারা নিত্য প্রভাবিত, সেখানেও যোগ দিতে অপারগ

কর্মের জগতে তাদের করা হয় অনাদর, উপেক্ষা শুধু দেহ মনেই যে তারা পঙ্গু তা নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেকে পরিবারের বোঝা আরো নানা ভাবে তাদের জীবন বিপর্যস্ত ভালোবাসার মানবিক উষ্ণ স্পর্শ থেকে তারা বঞ্চিত সামাজিক আনন্দ অনুষ্ঠানে, মানুষের বিচিত্র কর্মযজ্ঞে এদের কুণ্ঠিত প্রবেশ এমনকি গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষ অনুষ্ঠানের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি তেমন নয় তবে উন্নতি সাধিত হয়েছে এখন এক্ষেত্রে গণমাধ্যম আগের তুলনায় সতর্কতা বেড়েছে আসলে ওরা যে আমাদেরই স্বজন, আত্মীয় পরিজন একথাটা আমরা অনেকে স্বীকার করতে চাই না যে জন্ম দৈবের অধীন, যে পঙ্গুতা নিয়তির বিধান, তাকে কর্মের মহিমায় বরণ করার সহৃদয়তা কোথায়?

জাতিসংঘ প্রতিবন্ধীদের প্রতি পৃথিবীর  সমাজ রাষ্ট্রসমূহকে দায়িত্বশীল করার জন্য ১৯৮১ সনকেবিশ্ব প্রতিবন্ধী বর্ষ রূপে ঘোষণা করে জাতিসংঘের উদ্যোগেই প্রতিবছর ডিসেম্বর বিশ্বে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপিত হয় ফলে মানবজাতির একটি উপেক্ষিত দিক বিশ্ব মানবের দৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হওয়ার সুযোগ পায় এই সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত প্রতিবন্ধীরা দেশ, জাতি বা পরিবারের বোঝা নয় নয় সমাজের অগ্রগতি বিচিত্র ধারাপথের অন্তরায় বরং তাদের অংশগ্রহণে সেই সমাজপ্রবাহ হবে আরো প্রাণময়,আরো গতি প্রাণ সম্মিলিত কর্মতরঙ্গের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে এক সমৃদ্ধ বিশ্ব দীর্ঘকালে পুঞ্জিত øানির অবসান হবে মনে হবে নতুন প্রত্যয়ে উজ্জীবিত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গড় হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা দশ ভাগ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী শারীরিক মানসিক পঙ্গুত্ব মানুষকে প্রতিবন্ধী করে তুলে মানুষের এই শারীরিক মানসিক পঙ্গুত্ব সংঘটিত হয় নানা কারণে যেমনঃ জন্মগত,ব্যাধিগত,অপুষ্টি কিংবা দুর্ঘটনাজনিত অথবা অজ্ঞতার কোনো কারণে এই কারণগুলোর কোনোটির জন্যই প্রতিবন্ধীরা দায়ী নয় বরং এর জন্য পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের ব্যর্থতাতে দায়ী করা হয় সমাজ প্রতিবন্ধীদের প্রতি যুগে যুগে অত্যন্ত হৃদয়হীন আচরণ করেছে ফলে তারা তীব্র মনঃকষ্ট ভোগে চিকিৎসা স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং দারিদ্র্য অশিক্ষা প্রতিবন্ধী হবার মূল কারণ আমাদের প্রয়োজন জাগ্রত চেতনার যথার্থ সুষ্ঠু কর্মসূচি গ্রহণ

চাই মহ অনুভবের বাস্তব রূপায়ণ ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত ¤প্রসারিত করেছে গত কয়েক বছরে সাত হাজারের ওপর প্রতিবন্ধীর কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর প্রতিবন্ধীদের জন্য পাতিপুকুরে প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছে এসব কেন্দ্রে শেখানো হয় সেলাই, কাটিং,ছাপাখানা বই বাধানোর কাজ শেখানো হয় হালকা ধরনের যন্ত্রপাতি চালানোর কাজ শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই ব্রত উদযাপনে নিয়েছে সক্রিয় মিকা এগিয়ে এসেছে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত বেশকিছু সংস্থা প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের জন্য ইউএনও,আইএলও এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র আজ সচেষ্ট

নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ সুস্থ মানুষের এখানে সুষ্ঠু জীবন বিকাশে পদে পদে বাধা অভাব, দারিদ্র্য এখানে নিত্য হাহাকার বেকার জীবনের দুঃসহ অভিশাপ জ্বালা তার উপর প্রতিবন্ধী সমস্যা বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের অবস্থা শোচনীয় এখানে পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায় সংখ্যাতীত অন্ধ,খঞ্জ তাদের কাতর আর্তনাদে আকাশ বাতাস হয়ে ওঠে বিষাদ ভারাক্রান্ত আজও এখানে লক্ষ লক্ষ প্রতিবন্ধী অন্যের কৃপাপ্রার্থী ভিক্ষাবৃত্তিই ওদের জীবনধারণের একমাত্র মুশকিল আসান

আসলে প্রতিবন্ধীরা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের গলগ্রহ নয়,নয় করুণার পাত্র, পৃথিবীতে তাদেরও কিছু দেওয়ার আছে আমরা চাই প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূলধারায় ফিরে আসুক তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাক সেজন্য আমাদের এখনো কিছু কাজ করতে হবে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে গণমাধ্যমকে প্রতিবন্ধীতা বিষয়ে গণমাধ্যমের ইতিবাচক মিকা জোরদার করতে হবে গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষ অনুষ্ঠানের মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে সেজন্য সংবেদনশীল নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়নের জন্য সাংবাদিকসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সচেষ্ট থাকতে হবে গণমাধ্যম কাঠামোতে প্রতিবন্ধীতা বিষয়টি আরও শক্তিশালীভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে প্রতিবন্ধীতাকে এখনো নেতিবাচক বিষয় হিসেবে ধরা হয়

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ থাকলেও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন কর্পোরেট খাতে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সংবেদনশীলতা তৈরি হয়নি বিদ্যমান ঘাটতি চিহ্নিত করে এগিয়ে যেতে হবে এছাড়াও  প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে নিয়োগের সুযোগ দিয়ে, অনুষ্ঠান অন্যান্য আধেয় তৈরি, গণমাধ্যমের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি, রিপোর্টারদের দক্ষতা উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে গণমাধ্যম আধেয় পড়তে দেখতে শুনতে পারে তার জন্য প্রযুক্তিগত পরিকল্পনার ওপর জোর দিতে হবে

আমাদের উচিত প্রতিন্ধীদের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদেরকে মন থেকে ভালবাসা যদি আমরা তাদেরকে একটু আদর স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলি তাহলেই চির অবহেলিত প্রতিবন্ধীরা খুঁজে পাবে তাদের দুর্লভ মানব জন্মের একটি গৌরবময় অধ্যায় জন্ম মূহুর্তেই অভিশাপ যাদের ললাট লিখন, জীবনের উচ্ছল আনন্দের দিনগুলো মাঝপথেই নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে যাদের পথ হয়ে গেল গতিরুদ্ধ, যারা শুধু পেল যুগ যুগান্তরের অনাদর আর উপেক্ষা, পতিত, অপাংক্তেয় হিসেবে যারা হলো পরিচিত, ধুলিতল হলো যাদের শয়ন শয্যা,যারা বেঁচে থেকেও মৃত,আজকের এই জাগ্রত চেতনার মুহূর্তে আমরা যেন বলতে পারি,এরা আমাদের ভাই,এদের সঙ্গে আমাদের আজন্ম কালের বন্ধন

শিক্ষার্থী , ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় 

×