ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দ্য সিম্পসনের প্রফেটিক উইজডম ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ॥ অভিমত

দিলরুবা শাহানা

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২ নভেম্বর ২০২৪

দ্য সিম্পসনের প্রফেটিক উইজডম ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ॥ অভিমত

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস

বাচ্চাদের কার্টুন  দি  সিম্পসন বেশ মজার। বেশ পুরনোও। শুরু বোধহয় ১৯৮৯ সালে। সিম্পসন কার্টুনটি  বাচ্চাদের সঙ্গে আমিও দেখতাম। এখনো দেখি  যখনই  সুযোগ  পাই।  সত্যি  বলতে  কি,  বাচ্চাদের  চোখে বিশ্বকে দেখার মজাই আলাদা। ওরা সহজেই  সত্যটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। মনে আছে হ্যান্স এন্ডারসনের লেখা ‘দ্য এম্পারার ক্লৌদ’ গল্পের  সেই ছোট্ট শিশুটির কথা? রাজপথে তথাকথিত জমকালো নতুন পোশাক পরে সপারিষদ গর্বিত  পদক্ষেপে রাজা যাচ্ছিলেন সে শিশু হঠাৎ বলে উঠল ‘রাজার কাপড় কোথায়’! কি  মজা  করেই  সে শিশু উলঙ্গ  রাজাকে শুধু নিজেই দেখল না, বাকি সবাইকেও বাধ্য  করল  সে  সত্য  মেনে নিতে।
সিম্পসনের চার আংলা (ওদের সবার চারটা করে  আঙ্গুল) পরিবার নিয়ে বাচ্চাদের ভার্সন কার্টুনটা  অনেক জনপ্রিয়। সে কার্টুনের এক এপিসোডে সম্ভবত ২০০৪ সালে  দেখানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছে  ডোনাল্ড  ট্রাম্প। ঘটনাটা ব্যঙ্গ করা তুলে ধরা হয়েছিল ওই  এপিসোডে। সিম্পসন পরিবারের বুদ্ধিমতী মেয়ে  লিসা অক্সফোর্ডে পড়তে যায়। বাচ্চাদের মতো আমারও পছন্দের ভধাড়ঁৎরঃব ভড়ঁৎ ভরহমবৎবফ ভধসরষু. সিম্পসনরা আমেরিকান। পরিবারে বাবা হোমার, মা মার্জ  আর  সন্তান তিনজন, লিসা,বার্ট ও ছোট বেবি ম্যাগী।

তাদের নিবাস স্প্রিংফিল্ড নামে এক  জায়গায়। আমেরিকার সেই ছোট্ট লোকালয়  স্প্রিংফিল্ড থেকে চার আংলা  বুদ্ধিমতী  বালিকা  লিসা  অক্সফোর্ডে গিয়ে শুনে ওর দেশের প্রেসিডেন্ট  ডোনাল্ড  ট্রাম্প। সে কি  বিব্রতকর অবস্থা লিসার! আজ  থেকে  বহু বছর  আগে  লিসার  জন্য  যা  ছিল  অস্বস্তিকর, ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই পরিস্থিতি ছিল অপ্রীতিকর। 
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিদ্যালয় ইয়েল থেকে আইন  অধ্যয়ন করে নামকরা আইনজীবী হিলারী ক্লিনটন, যার রাষ্ট্রীয় নানা দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সেই  হিলারি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। পৃথিবীর  ডেমোক্রেসির  প্রবক্তা, রক্ষাকর্তা ও ডেমোক্রেসির সশস্ত্র যোদ্ধা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে দু’আড়াইশ’ বছরের ইতিহাসে তখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন মহিলা সুযোগ পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার।

হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বী লোকটি এমনি  গণতন্ত্রে বিশ^াসী যে, সে মানুষই সহ্য করতে পারে না। সে দেখতে পারে না মেক্সিকোর হিস্পানিকদের। যে কোনো মুসলমানকে সহ্য করা তার পক্ষে কষ্টকর! তখন গালগল্গ চলছিল যে, সেই ট্রাম্পই যদি দি সিম্পসনের এপিসোডকে সত্য প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই যায়, তবে  গোটা  বিশ^  মার্কিন ভোটারদের প্রাজ্ঞতা নিয়ে ভ্রুকুটি করবে নাকি?  
মজার ব্যাপার হলো, প্রাজ্ঞ মার্কিনিরা ট্রাম্পকেই বেছে নিয়েছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পদে বসেই সাত সাতটি মুসলিম দেশের কাউকে ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা এবং মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে দেওয়াল তোলার সিদ্ধান্ত দিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন।
এবারেও অনেক নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ডোনাল্ড ট্রাম্প নামের পুরুষকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন কি? কে জানে কি হতে যাচ্ছে? তবে এবারও ট্রাম্পের প্রতিদ¦ন্দ্বী একজন নারী এবং এই নারী আবার যুদ্ধবাজ এক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেণ্ট ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেণ্ট, যার নাম কমলা হ্যারিস (মার্কিনীরা বলে ‘কামালা হ্যারিস’)। শেষ পর্যন্ত কপাল কি ট্রাম্পেরই খুলবে আবারও? 
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী 

×