ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

প্রবীণদের ঠিকানা-  বৃদ্ধাশ্রম নাকি সন্তানের ঘর

ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১ অক্টোবর ২০২৪

প্রবীণদের ঠিকানা-  বৃদ্ধাশ্রম নাকি সন্তানের ঘর

১ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস

জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের কথায়, জীবনের সঙ্গে আমরা অতিরিক্ত বছর যোগ করতে পেরেছি, কিন্তু বাড়তি বছরগুলোয় জীবন যোগ করতে পারিনি। প্রবীণদের প্রতি বৈষম্য সমাজ-সংস্কৃতিতে একটি নিত্যকার নিদারুণ চ্যালেঞ্জ।
বাস্তবতা হলো আমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছি আমাদের প্রবীণদের, যারা আমাদের শিকড়। দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা সে শিকড়টি যেন উপড়ে ফেলছি। বাংলাদেশে গড় আয়ু বাড়ার কারণে ষাট বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রবীণরা আমাদের অনেকের কাছেই স্রেফ ‘বুড়া-বুড়ি’।

অধিকাংশই মহিলা তথা জননী ‘যার পদতলেই সন্তানের স্বর্গ’। বাস্তবে জননীকুলের অনেকের অবস্থা খুবই অসহায়, ‘সন্তান পরিত্যক্তা জননী’। আমাদের বহুমুখী কর্মব্যস্ততায় পারস্পরিক দায়বদ্ধতা লোপ পাচ্ছে। আর মা-বাবা তথা প্রিয়জনসহ প্রবীণদের প্রতি বাড়ছে উপেক্ষা। কর্মক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, সামাজিক সেবাসুবিধা, গণমাধ্যম, বিনোদন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নীতিনির্ধারণ এবং পরিবার ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবীণরা হামেশাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে আজকাল অনেকেই ওল্ডহোম বা বৃদ্ধদের জন্য আবাসিক ভবনে এসে আশ্রয় নেন। কেউ হয়তো স্বাধীনভাবে থাকার জন্য স্বেচ্ছায় চলে যান বৃদ্ধাশ্রমে, কেউ বা নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই ভাগ্যকে বরণ করে নেন।
ওল্ডহোম বা বৃদ্ধনিবাস ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের। গত শতকের শুরু থেকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ‘আধুনিক’ গতিশীল জীবনযাত্রার উত্তরণ এবং একান্ন পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থার ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ ফল এসব বৃদ্ধাশ্রম। পশ্চিমা বিশ্বে একদিকে ব্যাপক মুনাফা প্রত্যাশী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অনুৎপাদনশীল জনসংখ্যাকে রাখতে চায় মূল কাঠামোর বাইরে, অন্যদিকে ন্যায়ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায় সারতে চায় সহজেই।

এর সঙ্গে আছে তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রবল আকাক্সক্ষা। তাই শেষ জীবনের আনন্দ আশ্রম হিসেবে বৃদ্ধাশ্রমই হলো তাদের কাছে সুন্দর স্বাভাবিক ব্যবস্থা। আর এ ব্যবস্থা এখন তাদের সংস্কৃতিরই অংশ। অনেকেই সুদীর্ঘ কর্মজীবন শেষে বৃদ্ধ বয়সে অবসরে নিজের মতো করেই স্বাধীনভাবে শেষ দিনগুলো কাটাতে চান, সন্তানের গলগ্রহ হয়ে থাকতে চান না। তাই কেউ কেউ নিজের মতো একাই থাকেন, কেউ বা ওল্ডহোমে সমবয়সী অন্য বয়সীদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। জীবনের শুরুতে স্কুলে যাওয়ার মতোই শেষ জীবনে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা তাদের অনেকের কাছেই খুব স্বাভাবিক পরিণতি এবং তারা এজন্য মানসিকভাবে তৈরিই থাকেন।
আজকাল আমাদের দেশেও বয়স্কদের জন্য এমন নিবাস গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার উপকরণ, আমাদের দেশে তার বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে এখনো ব্যক্তি থেকে পরিবারের গুরুত্ব বেশি। আগের একান্নবর্তী ব্যবস্থা এখন খুব একটা না দেখা গেলেও অন্তত মা-বাবাকে নিজের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই গণ্য করা হয়। ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে পরস্পরের সান্নিধ্যের শান্তিটুকুর মূল্য এখানে অনেক বেশি।

তাই ছেলে বা মেয়ে স্বাবলম্বী হলেই মা-বাবাকে ত্যাগ করে নিজে একা একা চলবে বা মা-বাবাকে আলাদা রেখে নিজে আলাদা থাকবে, এটা প্রত্যাশিত নয়। এখানে যেমন সন্তান সাবালক হলেই মা-বাবার দায়িত্ব শেষ হয় না, তেমনি মা-বাবা বৃদ্ধ হলে এবং কর্মক্ষম না হলে, তার দেখাশোনা করার সামাজিক দায়ভার সন্তানের ওপরই বর্তায়। তাই পশ্চিমের ওল্ডহোম আমাদের জীবনধারায় অনুপস্থিত থাকাটাই কাম্য ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিপরীতটাই দেখা যাচ্ছে।

পশ্চিমের মতো আমাদেরও জীবনযাত্রার ব্যস্ততা যেমন বাড়ছে, তেমনি ধীরে ধীরে বেশকিছু বৃদ্ধাশ্রমও গড়ে উঠছে। উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি পারিবারিক বন্ধনসমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এভাবে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হওয়া চিন্তার কারণ বৈকি। এ কথা সত্য, আমাদের দেশের বয়োজ্যেষ্ঠরা পাশ্চাত্যের মা-বাবার মতো সন্তানদের প্রতি উদাসীন থেকে বলগাহীন জীবনযাপন করেননি। তবে তাদের নিজেদের এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কেন?
বৃদ্ধাশ্রম আমাদের দেশে সংস্কৃতির অংশ নয়, বরং কিছুটা প্রয়োজন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের দেশে যারা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন, তার বেশির ভাগই যে স্বেচ্ছায় থাকেন, তা নয়। অনেকেই সন্তানের কাছ থেকে অবহেলা, অযতœ, অবজ্ঞা, উপেক্ষা, মানসিক নির্যাতন, এমনকি কখনো কখনো দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে, তারা সারা জীবনের সংগ্রাম আর সাধনার ফসল ‘আপন সন্তানদের’ কাছ থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়ে আশ্রয় নেন এসব বৃদ্ধনিবাসে, অন্তত একটু সম্মান ও শান্তিময় জীবনের জন্য।

আজ যারা বৃদ্ধ, তারা একদিন নিজেদের জীবনের টাকা পয়সা, ধনসম্পদসহ সবকিছু বিনিয়োগ করেছিলেন সন্তানের মঙ্গলের জন্য, নিজের জন্য রাখেননি কিছুই। কিন্তু বৃদ্ধবয়সে সন্তানের কাছ থেকে এর একটি ক্ষুদ্র অংশও তারা পাচ্ছেন না। কখনো দেখা যায়, সন্তান তার নিজের পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই মা-বাবাকে মনে করছে বোঝা। নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু আরাম-আয়েশে থাকার জন্য বাবা-মার ঠাঁই করে দিচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।

আবার এমনও দেখা যায়, সন্তানের টাকাপয়সার অভাব নেই, কিন্তু মা-বাবাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করছে না অথবা বোঝা মনে করছে। ভাবছে ‘এরা আসলে বুড়া-বুড়ি, তারা আর কী বোঝে’। তাই সন্তান হয়তো নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে, নয় তো অবহেলা আর দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছে, যেন তাদের মা-বাবা নিজেরাই সরে যান তার সাধের পরিবার থেকে। কারও আবার  টাকার অভাব না থাকলেও মা-বাবাকে দেখভাল করা বা তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই। তাই বাবা-মা একা একা নির্জনে থাকার চেয়ে বৃদ্ধনিবাসে অন্যদের সঙ্গে একত্রে সময় কাটানোই তাদের জন্য ভালো।

কারও কারও সন্তান চাকরির কারণে অবস্থান করে দেশের বাইরে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। মা-বাবাকে বাইরে নেওয়া সম্ভব হয় না এবং তারাও বিদেশে যেতে চান না। ফলে তার সন্তানরা টাকা-পয়সা পাঠাতে পারলেও মা-বাবাকে সময় দেওয়া আসলেই সম্ভব হয় না। একবার বৃদ্ধনিবাসে পাঠাতে পারলেই যেন সব দায়মুক্তি। এভাবে নানা অজুহাতে মা-বাবাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক নামিদামি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী যারা একসময় খুব বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের সন্তানের দ্বারাই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, অনেকের জন্য বৃদ্ধনিবাস আসলেই অতিপ্রয়োজনীয় বিকল্প। অনেক বয়োবৃদ্ধ আছেন যার সন্তান নেই, এমনকি নেই কোনো নিকটাত্মীয়, যাদের কাছে তিনি শেষ দিনগুলো কাটাতে পারেন। আবার অনেকের সন্তান থাকলেও দেখা যায় তার আর্থিক সামর্থ্য নেই মা-বাবার ভরণপোষণ করার। বৃদ্ধাশ্রমে তাদের জীবন আরেকটু আনন্দময় হবে চিন্তা করেই হয়তো তারা বুকে পাথর বেঁধেই মা-বাবাকে সেখানে পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া অনেকেই জীবনসায়াহ্নে এসেও স্বাধীনচেতাই থাকতে চান, সন্তানের ওপর নির্ভরশীল থাকাকে এক ধরনের বোঝা মনে করেন, তাই নিজেরা স্বেচ্ছায় বৃদ্ধনিবাসে চলে যান।

তাদের জন্য বৃদ্ধনিবাস এক চমৎকার ব্যবস্থা। থাকা-খাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে, শেষ জীবনের অবসর সময়টা উপভোগের সুযোগ করে দেয় এসব বৃদ্ধাশ্রম। এখানে যারা থাকেন, তারা সবাই মিলে একটা নতুন পরিবার গড়ে তোলেন। সমবয়সীদের সঙ্গে হেসে-খেলে, স্মৃতিচারণা করে তাদের সময়টা ভালোভাবেই কেটে যায়।
তবে বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে দেখা যায়, বৃদ্ধাশ্রম অবহেলিত বৃদ্ধদের জন্য শেষ আশ্রয়স্থল। তাদের সারা জীবনের অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি, শেষ সময়ের সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া হয় এসব বৃদ্ধাশ্রমে। এখানে তারা নির্ভাবনায়, সম্মানের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারেন। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসারও সুন্দর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সব প্রাপ্তির মাঝেও প্রশ্ন থেকে যায়, মনের শান্তি কি তারা পেয়েছেন? তাদের মনের পর্দায় কি ভেসে ওঠে না প্রিয় সন্তান আর নাতি-নাতনির মুখ? আসলে এখানে যা পাওয়া যায় না, তা হলো নিজের পরিবারের সান্নিধ্য।
বৃদ্ধ বয়সে মানুষ তার সন্তান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে একত্রে থাকতে চান, আর তাদের সঙ্গেই জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চান। সারা জীবনের কর্মব্যস্ত সময় পার করার পর অবসরে তাদের একমাত্র অবলম্ব^ন এ আনন্দটুকুই। বলা যায়, এজন্যই মানুষ সমগ্র জীবন অপেক্ষা করে থাকে। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া যায়, সঙ্গী-সাথী পাওয়া যায়, বিনোদন পাওয়া যায়, কিন্তু শেষ জীবনের এই পরম আরাধ্য আনন্দটুকু পাওয়া যায় না। আর তাই তারা এই সময়টাতে প্রবল মানসিক যন্ত্রণা আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। অনেক সন্তান বা আত্মীয়স্বজন আর তাদের কোনো খবরও নেয় না।

তাদের দেখতে আসে না, এমনকি প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা বা জিনিসপত্রও পাঠায় না। বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে বা ঈদের আনন্দের সময়ও মা-বাবাকে বাড়িতে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। এমনও শোনা যায়, অনেকে মা বা বাবার মৃত্যুশয্যায় বা মারা যাওয়ার পরও শেষবার দেখতে যায় না। বৃদ্ধনিবাসের কর্তৃপক্ষই কবর দেওয়া বা যে কোনো শেষকৃত্য সম্পন্ন করার সব ব্যবস্থা করে, অথচ তার প্রিয় সন্তানরাই কোনো খবর রাখে না।
নেহাতই অনন্যোপায় হয়ে ইচ্ছার বাইরে যারা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু যারা নিজের পর্যাপ্ত সম্পদ ও সময়-সুযোগ থাকার পরও শুধু অবহেলা আর অবজ্ঞা করে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের ভুলে যায়, আর খোঁজখবর রাখার প্রয়োজন অনুভব করে না, তাদের স্মরণ রাখা দরকার, এমন সময় তাদের জীবনেও আসবে। যে বাবা-মা একসময় নিজে না খেয়েও সন্তানকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, তারা আজ কোথায় কেমন আছেন সেই খবর নেওয়ার সময় যাদের নেই, তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সঙ্গে এমনই আচরণ করবে।

বিভিন্ন উৎসবে, ঈদের দিনে বা পূজাপার্বণে যখন তারা তাদের সন্তানদের কাছে পান না, এমনকি একটি ফোনও পান না, তখন অনেকেই বৃদ্ধাশ্রমে বসে বসে নীরবে অশ্রুপাত করেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। এমনকি সেই সন্তানকে অভিশাপ দিয়ে কামনা করেন যে, সন্তান তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, ভবিষ্যতে তার ছেলের সন্তানও যেন তাদের সঙ্গে একই আচরণ করে। এখন সময় এসেছে এটা অনুধাবন করার, আমরা প্রবীণদের প্রতি বৈষম্য করছি এবং তা আর চলতে দেওয়া যায় না।

যারা আজ নবীন, তারাও একদিন প্রবীণ হবেন এবং এই নিয়তি তাদের জন্যও আসবে, এটি ভেবে আমাদের প্রবীণ বাবা-মায়ের প্রতি যতœ নেওয়া জরুরি। তাদের অধিকার রয়েছে আমাদের ভালোবাসা পাওয়ার। মনে রাখতে হবে, প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের গুরুজন ও পথপ্রদর্শক। সব রকমের সুবিধাসহ তাদের সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।    
দুটো গল্প দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করছি
(১) এক ভদ্রলোক তার বৃদ্ধ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছেন। ফেরার পথে মাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিছু বলবে মা’। মা বললেন ‘একটা কথা মনে রাখিস, তোর ছেলেকে মানুষ বানাবি, যেন ভবিষ্যতে আমার মতো তোর ছেলে তোকে এই বৃদ্ধাশ্রমে না রেখে আসে’।
(২) এক ভদ্রলোক তার বৃদ্ধ মাকে বড় একটা ঝুড়িতে করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসলেন। তার বাচ্চা ছেলেটা তা লক্ষ্য করল। ভদ্রলোক যখন বাসায় ফিরে এলেন, বাচ্চা ছেলেটি তার বাবাকে বলল, ‘ঝুড়িটা কোথায়? আমাকে তা দিয়ে দাও। আমি যতœ করে রাখব, ভবিষ্যতেও তোমাকেও বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার সময় এই ঝুড়িটার প্রয়োজন পড়বে’।
বৃদ্ধাশ্রম যেন কোনো বাবা-মায়ের শেষ বয়সের ঠিকানা না হয়, এই হোক আগামীর অঙ্গীকার। মনে রাখতে হবে, বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বাধ্য করা হলে তার অনুতাপ সন্তানের জীবনকেও একসময় দগ্ধ করবে। 
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক

×