ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়ানো চাই

অলিউর রহমান ফিরোজ

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঘুরে দাঁড়ানো চাই

বন্যার পানি নামার ধীর গতি বানভাসিদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে

বন্যার পানি নামার ধীর গতি বানভাসিদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জনপদের ক্ষত বের হতে শুরু করেছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো কঙ্কালসার অবস্থা বিরাজ করছে। বানভাসিদের ঘরের ঘুটি আর চাল ছাড়া কিছু অবশিষ্ট নেই। অনেকের বাড়ির ঘর আবার বানের পানিতে ধসে পড়ে আছে। এতদিন ভয়াবহ বন্যার জলের কারণে সাহায্য-সহযোগিতা যেমনটা ছিল এখন তা অব্যাহত নেই।

কিন্তু এখনই বানভাসিদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য দরকার। ৫৫ লাখ লোক এ বারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ, ফসল এবং অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন ঘটেছে। তা এখন জরুরিভাবে মেরামত করা দরকার। অনেক বন্যার্ত এখন ঘরে ফিরছেন। ঘরে ফিরে অনেকে  আবারও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে এসেছেন। তার কারণ হলো- পানি কমে গেলেও এখনও ঘরে থাকার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া ঘরে খাবার নেই।

সর্বগ্রাসী বানে বাড়ি ঘরের সব কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কারও কারও শুধু ঘরের কাঠামোটুকুই বাকি আছে। চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব উপকরণ বানের জলে ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। রান্না করার মাটির চুলাটিও পানিতে গলে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বলা চলে ঘরের সকল অবকাঠামো এখন অকার্যকর। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে ছোট ছোট অনেক উপকরণ সাহায্য-সহযোগিতা দরকার।

কারও চাল আছে, চুলায় আগুন ধরানোর মতো ম্যাচ লাইট নেই। চুলা আছে তো চাল নেই। এই উপকরণগুলোর এখন বড়ই অভাব বানভাসি মানুষদের। তারা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার সময়ে শুকনা খাবারই তাদের সবচেয়ে বেশি খেতে হয়েছে। একমুঠো ভাত খেতে অনেকেরই মনটা আঁকুপাকু করছে। তাই সাহায্যের ধরন এখন কিছুটা পাল্টাতে হবে। আগে ছিল মুড়ি-চিড়া, বিস্কুট অন্যান্য শুকনো খাবার। এখন ঘরে ফেরাদের চাল-ডাল, তেল-লবন, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তাদের বরাদ্দ দিতে হবে।

ছোট ছোট সাহায্যের মাধ্যমে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাই এখন জরুরি। পর্যায়ক্রমে আবারও সাহায্যের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। এখন শুধু ঘরগোছানোর কাজ এবং খাবারের নিশ্চয়তা দরকার। পরবর্তীকালে তাদের নিজ নিজ পেশাতে যাতে ফিরে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষককে কৃষি সহায়তা দিতে হবে। কর্মজীবীদের কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুঁজির জোগান নিশ্চিত করতে হবে। মূলত ঢেলে সাজাতে হবে বন্যাদুর্গত এলাকাকে। তার আগে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে পুনর্গঠনের।

যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতির অবকাঠামোর ভীত সেখানে শক্ত করা যাবে না। তবে এবারের বন্যায় ভবিষ্যতের জন্য আমাদের শিক্ষণীয় রয়েছে। দেশে যে কোনো ধরনের বড় বিপর্যয়ে যাতে প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী উদ্ধার কাজের যোগ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। বন্যার্তদের উদ্ধারে কি কি সরঞ্জামাদি লাগে তা দুর্যোগ অঞ্চলভেদে রাখতে হবে। 
রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ থেকে

×