ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

অস্থির বাজার

প্রকাশিত: ২০:০২, ১৯ মে ২০২৪

অস্থির বাজার

.

গত ঈদুল ফিতর রোজার সময় নিত্য খাদ্যপণ্যের দামে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কিছু স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেলেও পরিস্থিতি বদলে গেছে দ্রুত। বর্তমানে বাজারে প্রায় সর্বত্র এক ধরনের অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেমন- আমন মৌসুমে আশাব্যঞ্জক ফলন এবং চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও বাজারে সবরকম চালের দাম বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে আটার দামেও। গম যেহেতু বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, সেহেতু ডলারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে আটার দাম না হয় বেড়েছে। কিন্তু ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়বে কেন? অনুরূপ বেড়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদের পর পরই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দিলেও খোলাবাজারে বেড়েছে তেলের দাম। অজুহাত সেই ডলারের দাম বৃদ্ধি। মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ শাকসবজির দামেও অস্থিরতা বিরাজ হচ্ছে। এবারে ব্যবসায়ী উৎপাদক শ্রেণি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহকে। এর ফলে খাল-বিল, নদী-নালা প্রায় শুকিয়ে গেছে। ফলে, ব্যাহত হয়েছে শাকসবজির উৎপাদন। অন্যদিকে তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা- যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে ডিম, দুধ মাংসের দামে। তীব্র দাবদাহে মারা যাচ্ছে মুরগি। কমেছে ডিম, দুধ মাংসের উৎপাদন। হুমকিতে রয়েছে গবাদিপশু।

তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডিমের দাম, যা গরিবের প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত। ডিমের দাম প্রতিডজনে এক লাফে বেড়েছে ৪০ টাকা। আগে যে ডিমের ডজন বিক্রি হতো ১২০ টাকায়, তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। ডিমের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের ভাষ্য, ডিম সিন্ডিকেটের নামে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রোজার পরপরই আলু রাখার হিমাগারে কয়েক লাখ ডিম সংরক্ষণ করেছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ডিমের দাম বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ ডিমের মজুত ধরাও পড়েছে সংশ্লিষ্টদের হাতে। সে অবস্থায় ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সরকার চাইলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে দুঃসাধ্য। কেননা, ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোরেশোরে। সাধারণ মানুষেরও ক্রয়ক্ষমতার ঊর্ধ্বে চলে গেছে ডিমের দাম। শক্তিশালী অসাধু সিন্ডিকেট চক্র প্রতিনিয়ত বাজার ব্যবস্থাপনায় তৈরি করছে অস্থিরতা। দেশের বৃহৎ পাঁচটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে ডিমের বাজার। প্রায় দুবছর আগে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনে মামলা করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। অদৃশ্য শক্তির কারণে সেই মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

জরুরি নিত্যপণ্যের দাম প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে হাতেগোনা কয়েকটি বড় গোষ্ঠী। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী পণ্য আমদানি বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকবে। বাস্তবে একে অন্যের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে পণ্য আমদানির প্রতিটি পর্যায়ে একচেটিয়া বা মনোপলি বাজার তৈরি করা হয়েছে।

ক্ষুদ্র মাঝারি পর্যায়ের আমদানিকারকদের অনেকেই এখন ডলার সংকট আর কথিত সিন্ডিকেট চক্রের সম্মিলিতআগ্রাসনেটিকতে না পেরে সরে দাঁড়াচ্ছেন আমদানি বাণিজ্য থেকে। বড় ব্যবসায়ীরা একজোট থাকায় ছোটদের দরকষাকষির কোনো সুযোগ থাকে না। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী চক্রের দাপট বেড়েই চলেছে। শক্তির উৎস খুঁজে বের করে তা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কোন্ পণ্য কি পরিমাণ আমদানি হচ্ছে, কোথায় কতটুকু মজুত আছে, এসব বিষয়ে স্বচ্ছ তথ্য থাকা প্রয়োজন। পণ্যের ব্যবসায়ীদের রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু করে ব্যাংক লেনদেন অনলাইনে হালনাগাদ করাও দরকার। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে ডিম আমদানিতে ছাড়পত্র দেওয়া উচিত।

×